রবিবাসরীয় বিভাগ
আজকের গল্প
সিদ্ধান্ত
সমাজ বসু
শেষ খাওয়াটা খেয়ে নিল অনীক। আজ নিয়ে তিন দিন, এই অপমান। না, আর না। মুহূর্তটা ভাবতে পারে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। এতদিনের কোম্পানির প্রতি তার দায়বদ্ধতার কোন মূল্য নেই? সামান্য ভুলের এতখানি প্রতিক্রিয়া? জীবনের প্রতি মোহ হারিয়ে ফেলে। সিদ্ধান্ত তাকে নিতেই হলো।
রাতে খাওয়ার পর একটা মিষ্টি খেতে ভালবাসে। মিষ্টিটা মুখে তুলতেই ফোন বেজে উঠল। এখন আর কথা বলার মানসিকতায় নেই। ফোনটা কিছুক্ষন পর থেমেও গেল। কিছু কি লিখবে? না, এইভাবে সে অতর্কিতেই চলে যাবে। আবার ফোন বেজে উঠল। সেই একই নম্বর। কি বলতে চায়? তাঁর কিছু শোনার ইচ্ছেই নেই। তবু কলটা রিসিভ করল। শেষবারের মত।
--- ঘোষ দা,আমি জয়িতা বলছি। আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন। আপনি আমার বাবার মত হঠাৎ কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। আজ থেকে পনের বছর আগের ঘটনা। অফিস থেকে অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন আমার বাবা। সেই রাতেই তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। একবারও ভাবেননি আমার আর মায়ের কথা। জানি না, সেদিন বাবার অফিসে ঠিক কি ঘটেছিল? হয়ত আজকের মতই কোন জুনিয়র স্টাফের সামনে...কথা শেষ করতে পারে না জয়িতা। গলা ধরে আসে। বিভ্রান্তির এক চোরাস্রোত অনীককে টানতে থাকে। বুঝতে পারে জয়িতার মনের অবস্থা।
--- তোমাকে আর কিছু বলতে হবে না। মেয়েটাকে স্বান্ত্বনা দেয়।
--- তুমি কিছু ভেব না।আমি ঠিক আছি। নিজের ভুল বুঝতে পারে অনীক। নিজের অনিচ্ছাকৃত অসাবধানতার কথা মনে পড়ে।
--- ছুটির সময় আপনাকে খুব বিমর্ষ লাগছিল। তাই ফোনটা করলাম। এত রাতে ফোন করলাম বলে কিছু মনে করবেন না। কাল দেখা হচ্ছে। গুড নাইট।
গুড নাইট বলে ফোনটা রেখে দিল অনীক।
ফোনটা রেখে দিতেই মেয়েটার মুখখানা মনে পড়ল অনীকের। সে জানে,পরশু দিন বাবা আসবে। সপ্তাহ শেষের দুটো দিন। অনেক কথা জমিয়ে রাখে মেয়েটা। অনেক নালিশ। ইচ্ছে কিংবা স্বপ্ন। তাঁর মনে হলো,জয়িতা হয়ে কিছুতেই বাঁচতে পারবে না সে। বড় অসহায়,অনিশ্চিত আর নিঃস্ব জীবন। আর কিছুই ভাবতে পারে না অনীক।
রাত প্রায় বারোটা। নিঃসঙ্গ পথঘাট। এক টুকরো চাঁদ ঝুলছে আকাশে। শুধু থৈ থৈ করছে হ্যালোজেন ল্যাম্পের আলো। সব অন্ধকার লুকিয়ে পড়া স্বত্তেও,সবার অলক্ষ্যে অনীক এক পাতা ঘুমের ওষুধ ছুঁড়ে ফেলে বড় রাস্তায়। ভোরের আলো ফুটতে অনেক দেরি। রাস্তায় ঝড়ের গতিতে ছুটে চলেছে দু একটা গাড়ি। সে জানে, ভোরের আগেই কোন বেপরোয়া গাড়ির চাকায় পিষে যাবে তার বেয়াদব সিদ্ধান্ত।
এই বিভাগে আপনিও আপনার মৌলিক ও অপ্রকাশিত লেখাটি পাঠিয়েদিন।
ankurishapatrika@gmail.com
খুব সুন্দর একটি অণগল্প।স্বল্প পরিসরে তিনি একটি
উত্তরমুছুনবিশাল ভুলের কথা তুলে ধরেছেন।তাক্ষণিক সিদ্ধান্তে
মানুষ নিজের জীবন নিজেই হরণ করেন। তিনি
চলে যান ঠিকই কিন্তু তাঁর পেছনে পড়ে থাকে
তাঁর ভালোবাসার মানুষজন। অনবদ্য সৃষ্টি। খুব ভালো লাগলো।
অণুগল্প । তাৎক্ষণিক।
উত্তরমুছুন