শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

রবিবাসরীয় বিভাগ।। আজকের গল্প।। বুড়ি — অজিত বাইরী।। Ankurisha ।। E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 





রবিবাসরীয় বিভাগ

আজকের গল্প



বুড়ি  

অজিত বাইরী



বুড়ি শীতের দুপুরে  ভাতের থালা নিয়ে  বসেছিল উঠোনে। বুড়ি ভাতের থালা নিয়ে বসলেই কোত্থেকে যে কাকগুলো এসে কান ঝালাপালা করে! মুখে গ্রাস তোলার মুহূর্তে পায়ে পায়ে  পাতের কাছে এগিয়ে আসে। বুড়ি দুর্বল হাতে  কাকগলোকে তাড়াবার চেষ্টা করে। তাড়া খেয়ে কাকগুলো সামান্য তফাতে সরে যায়; পরক্ষণেই আবার পাতের চারপাশে ভিড় করে।

— দূর, দূর হ হতচ্ছাড়ারা--বুড়ি লাঠি উঁচিয়ে ধরে।আরু দৌড়ে আসে। কাকগুলোকে তাড়িয়ে দেয় । আরু ঠাকুমার খুব নেওটা। ঠাকুমা যা বলে, শোনে। বিনিময়ে শীতের দুপুরে আচার খাবার সুযোগ পায় । ঠাকুমা দু'চার পয়সা দিলে হাওয়াই মিঠা কেনে।ঠাকুমা যতক্ষণ ভাত খায়, পাশটিতে বসে থাকে। কাকের উৎপাত থেকে আড়াল করে।পাতে মাছের টুকরো না থাকলেই বুড়ি মাথা গরম করে ফেলে। মুখে যা আসে অকথা-কুকথায় ছেলে-বউকে গালিগালাজ করে।

আরু বলে, চুপ, চুপ কর না। মা শুনতে পাবে যে! আরু ভয়ে ভয়ে থাকে, মা যদি শুনে ফেলে, তাহলেই দক্ষযঞ্জ বাধাবে। মা গাছকোমর বেঁধে আঙুল উঁচিয়ে বলবে, চোখে দেখতে পাস না! কানা নাকি? সংসারটা কিভাবে চলছে? রোজ রোজ মাছ খাবার শখ কেন?বুড়ি গলা চড়ায়, দিবিনে কেন? গাণ্ডেপিণ্ডে তোরাই গিলবি?খাবারের খোটা খেয়ে  মা আলকেউটের মতো ফুঁসে ওঠে। এই মারতে যায় তো ঐ মারতে যায় ।


আরু অসহায় ভাবে দূর থেকে তাকিয়ে থাকে । তার বাধা দেবার সামর্থ্য কতটুকু! বুড়ি হাউমাউ করে কান্না শুরু করে, ও রামু, কোথায় গেলি, দ্যাখ, তোর বউ আমাকে মেরে ফেললে।মা ধমক দেয়, চুপ কর বুড়ি ।ধমক খেয়ে বুড়ি মুহূর্তের জন্য চুপ করে। তারপর আবার ইনিয়ে-বিনিময়ে কান্না শুরু করে। এরপর আর দোষারোপ করে না, কপালের দোষ দেয়, আর কপাল চাপড়ায়। মা সরে গেলে আরু কাছে আসে। বলে, কাঁদিস নে, খেয়ে নে। বাবা এলে, কাল মাছ আনতে বলবো'খন। বুড়ি আশ্বস্ত হয়। অশক্ত মুঠিতে ভাতের দলা মুখে পোরে। জোড়াতালির সংসারে নিত্য অভাব। বুড়ি  বুঝেও বোঝে না। অবুঝের মতো ঝগড়া বাধায়, আমার ভাতার কীসের অভাব রেখে গেছে? দু'বেলা দু'মুঠো ভাত দিতেও অনিচ্ছে!রামু বউয়ের মুখে সব শোনে। শরীরে রাগ হয় । এক একদিন মাত্রাছাড়া হলে চ্যালাকাঠ দিয়ে  পেটায়।

বুড়ি সেদিন কাণ্ডজ্ঞান হারায়। বলে, বউ তোকে বিয়োয়নি। আমি গব্বে ধরেছিনু। বউয়ের কথা শুনে মাকে পেটাস? তোর ভাল হবে ভেবেছিস?আরু বাবাকে মাছের কথা বলবে ভেবেছিল। ভয় পেয়ে  চুপ করে যায়। ক'টা দিন কারো মুখে কথা সরে না।সেদিন পাতে মাছ পড়েনি; বুড়ি তবু কোন গোল করেনি। দু'গ্রাস তুলেই হাত থেমে গিয়েছিল। সেই অবসরে রাজ্যের কাক এসে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাতের উপর। আরু বুঝতে পারেনি, ঠাকুমা খাচ্ছে না কেন?কিছুক্ষণ ঠাকুমার স্থির চোখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর হঠাৎ  চিৎকার করে উঠলো,মা—মা— আরুর মা চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে দেখলো, বুড়ির শেষ গ্রাস তোলা হয়ে গেছে।


বুড়ির জন্য  যার চোখ কখনো ভিজে ওঠেনি, আজ তার দু'চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।





----------------------------------------------------------------- 



এই বিভাগে আপনি আপনার  সেরা  মৌলিক অপ্রকাশিত লেখাটি পাঠিয়েদিন। 

মেল— ankurishapatrika@gmail.com

1 টি মন্তব্য:

  1. খুব সুন্দর একটি ছোট গল্পের ছোঁয়া পেলাম। সারা জীবন কষ্ট করে যাওয়া মানুষের পরিসমাপ্তি ঘটে এভাবেই।

    উত্তরমুছুন