বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

ধারাবাহিক উপন্যাস ( পর্ব-১১) ।। ছায়া- ছায়া অন্ধকারের আড়ালে — অনন্যা দাশ।। Ankurisha ।। E.Magazine ।। Bengali poem in literature ।।

 







ধারাবাহিক উপন্যাস ( পর্ব-১১) 



ছায়া- ছায়া অন্ধকারের আড়ালে 

অনন্যা দাশ 




আমি সমস্ত ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছি। বিশেষ করে ঘুমের ওষুধ। মনটা খুব খারাপ। ওরা মানে পুলিশ ইঙ্গিত দিয়েছে যে ওরা বুঝতে পেরেছে যে আসলে ঐশী বলে কেউ নেই! ঐশী আমার মন থেকে গড়া একটা চরিত্র! আসলে আমার ডি আই ডি বা মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসর্ডার আছে তাই ওটা আমার দ্বিতীয় সত্তা! আমি আন্দাজ করতে পারছি যে ওরা আমাকে যে কোন সময় গেরেফতার করবে। হয়তো পাগল বলে পাগলখানায় ভরে রাখবে। এই সময় আমার মাথাটা পরিষ্কার থাকাটা খুব দরকার। কোন রকম ঝিম ধরা ভাব থাকলে চলবে না। আমাকে সজাগ থাকতে হবে, পুরোপুরি সজাগ। ওরা চলে যাওয়ার পর আমি সারা বাড়িটা তন্ন তন্ন  করে খুঁজলাম ঐশী যে ছিল তার কোন কিছু একটা প্রমাণের জন্যে কিন্তু কিছু পেলাম না। মেয়েটা ভয়ঙ্কর ধুরন্ধর, সব কিছু কেমন রাতারাতি সরিয়ে ফেলেছে! অবশ্য রাতারাতিও করতে হয়নি, আমি তো সব সময় ল্যাবেই পরে থাকি তাই ওর হাতে প্রচুর সময় ছিল! আর বাড়িটা তো এমনিতেই ফার্নিশড, তাই আসবাবপত্র নিয়ে যাওয়ার তো ব্যাপার ছিল না। নিজের যা একটু জিনিস ছিল সব নিয়ে ভেগেছে মেয়েটা। আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে ঐশী বলে আসলে কেউ নেই! তা কী করে সম্ভব? ওর হাইট, চুলের রঙ, চুল বাঁধার ধরণ, সব কিছুই অনেকটা আমার মতন, তবে পুরোটা না, অনেকটাই। তাই এখানকার লোকজন হয়তো দূর থেকে দেখে তফাত ততটা বুঝবে না। তাই পাড়ার কেউ পুলিশকে কিছুই বলতে পারেনি ঐশীর কথা। এমনিতেও তিন মাস মোটে তো ছিল, তাও বাড়িতে থাকতই বা কতক্ষণ, তাই সবাই বলেছে এই ফ্ল্যাটে, মানে আমার ফ্ল্যাটে একজন ভারতীয় মেয়ে থাকে! ও কোন কোম্পানিতে কাজ করে সেটাও তো আমি ঠিকঠাক জানতাম না। ও আমাকে বলেছিল জিন টেক কিন্তু ওই নামে কোন কোম্পানি নাকি এই তল্লাটে নেই!  কী মতলব ছিল ওর? কী চাইছিল মেয়েটা? কেন আমার সঙ্গে থাকতে এসে ছিল এখানে? আমাকেই কেন বেছে নিল?    


আমি জানি ওই রামগড়ুরের ছানা পুলিশ ডিটেকটিভ রোহন কুমার আর তার পার্টনার যে কোন মুহূর্তে হাজির হবে আর আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে পুরে দেবে তাই আমি একট ব্যাকপ্যাকে সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছিলাম, মানে দরকারি যা কিছু আমার লাগতে পারে সেই রকম যা মনে পড়ছিল সব। পাসপোর্ট আর অন্য দরকারি কাগজপত্র, ফোনটা, শুকনো খাবার, এনার্জি বার ইত্যাদি। কিছু হাল্কা জামাকাপড় নিলে ভালো হয় এই ভেবে লন্ড্রি করা জামাকাপড়গুলোকে ভাঁজ করতে নিলাম। ওমা তখনই আমার চোখে পড়ল, একটা স্কিন কালারের স্পোর্টস ব্রা! ওই জিনিস তো আমি কোনদিন কিনিনি, পরিও না! ওটা ঐশীর হতে বাধ্য! ওটা দিয়ে আমি কিছু প্রমাণ করতে পারব না। রোহন কুমারকে বললে মানবে না কিন্তু আমি মনে একটা বিশাল শান্তি অনুভব করলাম! নাহ আমি পাগল নই, আমার ডুয়াল পার্সনালিটি ডিসর্ডার নেই! ঐশী বলে যে মেয়েটা আমার বাড়িতে ছিল সে সত্যিই আছে। কোথায় গেল সে, কেন গেল সেটা আমাকে খুঁজে বার করতে হবে। যদিও কেন গেলটা বলা সহজ, ওই তো খুনটা করেছে! তাই পালিয়েছে সেই সব পাপের বোঝা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে! নাহ, আর দেরি করলে চলবে না। আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে। আমাকে খুঁজে বার করতে হবে ঐশী কোথায়, নাহলে ওর করা যত বাজে কাজের বোঝা সব আমার ঘাড়ে এসে পড়বে।


ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিয়ে শেষবারের মতন একবার চারিদিকে দেখে নিয়ে আমি বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে। কোথায় থাকব সেটাও ঠিক করে ফেলেছি। এমন জায়গা যেখানে রোহনকুমার আর ওর পার্টনার আমাকে খুঁজেই পাবে না!   



অত ঝামেলার মধ্যেও মনে একটা উৎফুল্ল ভাব অনুভব করছিলাম। ঐশী আমার মস্তিষ্ক প্রসূত নয়! সে সত্যিই আছে। তবে হেঁটে যেতে যেতে আবার মনে হল, না আনন্দের কারণ তো নেই। এমনও তো হতে পারে নিজেকে ঐশী ভাবার মুহূর্তে আমি কোন দোকানে গিয়ে ওই জামাটা কিনে ফেলেছি? কিন্তু মনে হয় না। যাক কেউ দেখতে পাওয়ার আগেই আমাকে আমার গন্তব্যে পৌঁছে যেতে হবে। হনহন করে পা চালালাম আমি। আগেই বলেছি আমি কোথায় লুকিয়ে থাকব সেটা আমি জানি! আমাদের কলেজটা আসলে একটা মেডিকেল কলেজ আর হাসপাতালের অংশ। কলেজের বেসমেন্টে একটা মর্গ আছে। মর্গের পাশে একটা সাপ্লাই ক্লোসেট আছে, আসলে একটা ঘরের মতনই বড়ো। সেটা জিনিসপত্রে ঠাসা। সেখানে গিয়েই আস্তানা গাড়লাম আমি। মৃত ব্যক্তিরা আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না আমি জানি, জীবিতদেরই আমার বেশি ভয়! তাছাড়া আমার একটু সময় চাই। আমাকে ভাবতে হবে, সত্যিই ভাবতে হবে। কে কেন আমার ক্ষতি করতে চায়? আমার ডি আই ডি আছে বা আমি পাগল প্রমাণ করতে পারলে কার কী লাভ হবে? প্রোটিন বার আর জল খেয়ে স্লিপিং ব্যাগটা মাটিতে পেতে শুতেই ঘুমে চোখ জুড়িয়ে এল। শরীর আর মন দুটোই এতটাই ক্লান্ত আর বিধ্বস্ত যে কোন রকম ঘুমের ওষুধ ছাড়াই দিব্যি ঘুম এসে গেল!






(চলবে...)






আরও  পড়ুন 👇🏾👇🏾




https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/07/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_50.html




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন