দুঃসময়ের কবিতা -৪২
মঞ্জীর বাগ
১.
নিরালা
জল লুকোতে আমায় অরন্যেই যেতে হবে বোধহয়
পৃথিবী নিরালা পেয়ে ঘুরে বেড়ায় সুমেরীয় পাখি
অষ্ট্রেলিয়ার পথে পথে সপরিবারে ক্যাঙ্গারু
সকালের পাখায় আঁকে রোদ
একটু আড়াল চাই।নাহলে ঘেঁটে যাবে লাইনার ল্যাশ
সবাই বলে তুমি এলোমেলো দীর্ঘযাপন
অরন্যের নিবিড় আড়ালে কিছূ না হোক ছায়া আছে বেশ।
কতখানি কাঁদা পেলে কার্যকরী হয় বেদনার শীলমোহর, অবিবেচক বালিকা জানেনা
অরন্যে কাঁদতে গেলে নিবিড় হরিন ফিসফাস
আরও কাঁদলে পৃথিবী শুকিয়ে যায়...
২.
গান চিরন্তন
নদীর জলের চলাচলে যে গান লেখা থাকে
তার সফল সঙ্গতে মিশে থাকে আর্য রমনীর
বেদগান ঋত্বিকহোমাগ্নি বেদ মন্ত্র ধ্বনি। সিন্ধু এক
নদীরনাম নয়;সিন্ধু একটি সভ্যতা। এইসভ্যতার নাগরিক গানে আমি স্নানাগার কিংবা শস্য ঘর
আমাকে এইভাবে আঁকা যায় যেন
ধ্বংস স্তুুপ থেকে পাওয়া নিসুতো রমণীয় গান
গান বলতে মোহময় সুর যদি বলো তবে আমি যোগ্য সঙ্গত।
নদীর জলের সাথে ভেসে ভেসে হয়ত এখন
আমার ভিতর জন্ম নেবে ধান গান।এখন আমি মাটি।মাটি ভিতর ঘুমিয়ে থাকে যে আস্পৃহা
বীজ হয়ে অঙ্কুরোদ্গমের কথা লিপি।
লিপিলেখা ছিল আলতামিরার গুহায়।এক তীব্র বাইসন নতুন প্রস্তর যুগের শিকার লিখেছিল
শিকার জীবনের সত্য। বাঁচার আকাঙ্ক্ষা-য় কেউ
শিকার হয়, কেউ শিকার করে।
এসময় শিকার হয় অবোধ বধ্য নৈতিকতা-র পীঠভূমি
নদীর তীরে বসে আছি।এখন জল স্বচ্ছ নেই আর।
স্বচ্ছতোয়া গঙ্গার শুদ্ধতা এখন পরিহাস
নদীকে শুদ্ধ কুমারী রূপে বয়ে ঢযাওয়া...
ভেঙে যাওয়া স্বপ্নের মতো দেখি
বসে আছি।হেরে যাওয়া স্বপ্ন জড়করে
এখন বাতাসে ভাসে কটু ভেঙে যাওয়া ঘ্রান
চিতায় পোড়া চর্বি মাংসের গলেগলে পড়া
মরাকাঠ
তবু নদী পলিভরা বুকে শ্বাস গানের কথা বলে
তৃষিত জরায়ু ভরে যায় অমৃতবীজ
এসো জল;মা হই গান হই পৃথিবীর মতো
এদূষনের মধ্যে একটি চড়ুইয়ের বাসা এবং
আকাশের নীল রঙে নদীরজল মিশে
মধুবনী গ্রামের দেওয়ালে একটা নতুন
সভ্যতা বিনম্র ছবির মক্স আঁকে;
এমুহুর্ত আকেন্দ্রবিস্তার থেকে
বীজের গর্ভধান গান
হোমাপাখির না ওড়া ডানায়
আগুন ও সমুদ্র নদের মেয়ে।।মঞ্জীর বাগ
জল এক অনবদ্য গান
গাইতে পারে যে সে এক অনন্ত গায়ক,এক অদ্ভুত ভাল লাগা নিজের ভেতর ব য়ে নিয়ে যায়,
তাকেই আমি বলি স্রোত।
অলৌকিক মুগ্ধতায় গান এঁকে নেয় পাখি।
নদীর তীরে পাখিরা বলাবলি করছে ঈশ্বরমুখ
পাখির কূজন বলে ডাক যাকে সেইতো
ঈশ্বরীয় নবজন্ম গান
কত না অঙ্কুর জাগে আলোর গান ছোঁবে বলে
সময় ভেঙে দেয় তীর।
পুরুষ্ট শস্যকণায় ধানের জীবন লিপি উদাসীন পৃথিবী প্রান্ত থালায় পরিতৃপ্ত
আনন্দের শুভেচ্ছা কসুম।
গান লিখি আমি।
বোধস্নেহ দিয়ে গড়ে তুলি নদী। পাতায় পাতায় বোধিবৃক্ষ গান
আমার কোন ভেঙে যাওয়া নেই
তোমায় ধারন করি পালন করি আমি
ছোটপাখি ঠোট ছোঁয়ালে আমি মধুক্ষরা নদী।
নিজেকে মাটি বলে মনে হয়
মাটিতে মিশে গেছে মা
মা ও মাটি দেশ হয়ে জেগে আছে।
৩.
শুকতারা
বড় ক্লান্ত লাগে আমার
সুরে সুরে গভীর শ্বাস। মানবচরে পলিবন্ধন
পলি জমে চর জাগলে বাসবাস শুরু হয়
আমরা সমুদ্র ও নদের দিগন্ত গান শুনব বলে
সমুদ্র ছুঁয়ে বৈঠা ধরেছি।তোমার হেমন্তের গান
শোনা হয় নি পুরুষ পাখি।
তুমি হেমন্তের শিষধানের গানের শিশির
জলবিন্দু কনা নয়
বৃষ্টি হও তুমি। বিদ্যুৎ
পৃথিবীই একমাত্র সিঙ্গলমাদার
গর্ভধান একমাত্র বীজ হয়ে জন্ম উৎযাপন
আমাদের যৌথগানের রাগসঙ্গীত অনন্তবাদক
নদীর বুকে আবিলতা ভেসে যায়
তবুও দূষণ হয় না স্রোত
একটি গ্রামের গানে নদী ছিল। বাউলের একতারা
তুমি আর আমি জন্ম বাউল।
একতারা তৃষ্ণাচোখ বুজলেই দেখতে পাই মাঠ ধান,নিড়ান, চষাখেত। উড়ে যাওয়া পাখির গানে স্বরলিপি ডাক
এই নদীর তীরে বসে আছেন
তিনি নদীর কলতান
যারা বারবার ভাঙতে চায় জলজসংসার
তারা জলের জন্মঋণ মানে না
জন্ম এক শুদ্ধতা গান।
ভূমি ভিটেঘরে তুলসীমাটিতে এক প্রদীপ
রাত গভীর।
প্রতিধ্বনি আসছে না
এখনও আমি জেগে আছি
তোমার বুকের ভিতর গান
আলোআঁধারে কুবো পাখি ডাকছে
অন্তরে নদী বইলে সব কান্না মুছে যায়
ভোরের গান আর শুকতারা জাগে
স্বপ্ন ও ভোরে গান গায়...শুকতারা...
আরও পড়ুন 👇🏾👇🏾👇🏾
https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/06/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_58.html
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন