বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব-১৫)।। পৃথিবীর উল্টোপিঠ — বিশ্বশ্বর রায়।।Ankurisha ।। E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 



ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব-১৫)

পৃথিবীর উল্টোপিঠ

বিশ্বশ্বর রায়


গতকাল আর আজ প্রায় আলস্যে আর ঘুমিয়েই কেটে গেল৷ তবে আজ সন্ধেবেলা সবাইমিলে একটু বেরিয়েছিলাম কিছু কেনাকাটা করতে৷ বাইরে বেরোলেই শরীর-মন চাঙ্গা হয়ে যায়৷ হাত-পাগুলো একটু ছাড়ানো যায়৷


      বাবাই-এর সঙ্গে রোজই কথা হচ্ছে সন্ধ্যায়৷ আগামী ৩১ তারিখে ও এখানে আসছে৷ টিকিট কাটা হয়ে গেছে৷ আমরাও যাব ওর সঙ্গে ওর ওখানে সেপ্টেম্বরের ৯ তারিখে৷ তারও টিকিট কেটে নিয়েছে আসা-যাওয়ার৷ এদিকে জয়দীপও আজ New York Tour এবং গ্রে হাউন্ডের টিকিট কেটে নিল On line-এ৷ আসলে চার মাসে এখানে যতটুকু ঘুরে নেওয়া যায় তারই প্রস্তুতি৷



      আজ ১৫ই আগস্ট৷ ভারতের সাধারণ মানুষের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের দিন৷ এখানে সরকারি ভবন তো বটেই, ব্যক্তিগত প্রায় সব বাড়িতেই সারা বছর জাতীয় পতাকা টাঙিয়ে রাখার চল৷ আমাদের দেশে শুধুমাত্র স্বাধীনতা দিবস ছাড়া সাধারণ মানুষ জাতীয় পতাকা তুলতে পারে না বাড়িতে, ক্লাবে বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে৷ তাই মনে হয় জাতীয় পতাকার কী রং, কোন্ রঙের কী তাৎপর্য, অশোকচক্র বস্তুটি ঠিক কী তা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের শতকরা নব্বইজনই ঠিকঠাক জানে না৷ তাই মনে হয় জাতীয়তাবোধও সাধারণ মানুষের মনে ঠিকমতো জন্ম নেয় না৷ সাধারণ মানুষ মনে করে জাতীয় পতাকাটি নেতা-মন্ত্রীদেরই এক্তিয়ারভূক্ত, সর্বসাধারণের কোনো অধিকারই নেই৷ তাই স্বাধীনতা দিবসের আলাদা কোনো তাৎপর্য মানুষের মনে নেই বলেই বোধ হয়৷ যেখানে একজন মানুষের দৈনিক রোজগার ১৭ টাকা হলেই(২০১২ সালের হিসেব) নেতা-মন্ত্রী, অর্থনীতিবিদরা আত্মকণ্ডূয়ন করে বলেন যে, ওই মানুষগুলিও দারিদ্রসীমার উপরে, সেখানে মানুষের স্বাধীনতা এই ৬৭ বছর পার করেও ঠিক কতটুকু তা বোধগম্য নয়৷ এই দূরদেশে বসেও তাই স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে ভাবতে বসে ধন্দে পড়তে হয়৷ কোনোদিনাকি আমাদের দেশের মানুষ সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করতে পারবে! স্বাধীনতা অর্থে বলতে চাইছি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা৷ যা এখানকার প্রতিটি মানুষ উপভোগ করে৷ টেনশন বা দুশ্চিন্তা আমাদের দেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষের নিত্যসঙ্গী৷ একটা দিন কিভাবে অতিবাহিত করা যাবে, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-পরিজনদের নিয়ে কিভাবে সংসারযাত্রা নির্বাহ করা যাবে এই চিন্তায় ওই সব মানুষরা অনিদ্রা, হৃদরোগ, মধুমেহ ইত্যাদি রোগে জর্জরিত৷ পরিসংখ্যান বলছে সারা পৃথিবীর শতকরা ৪২ ভাগ মধুমেহ বা ডায়বেটিস রোগী এই ভারতেই৷ আর ওই রোগটি এখানকার মানুষের মধ্যে প্রায় নেই বললেই চলে৷ এখানকার মানুষের দৈনন্দিন ন্যুনতম চাহিদাগুলি সরকার নিশ্চিত করেছে৷ তাই এখানে পথেঘাটে ভিখারি, হকার ইত্যাদি দেখা যায় না৷ ফুটপাত দখল করে দোকান বা স্টলের সারি, ফাস্টফুডের দোকান বা অন্যান্য স্টল নিউইয়র্কের দু'একটি স্থান ছাড়া কোথাও অদ্যাবধি নজরে পড়ে নি৷ তাও সে স্টলগুলি রাস্তার ধার ঘেঁষে দাঁড় করানো এবং চলমান, চিরস্থায়ীভাবে স্থাপিত নয়৷ আর ফুটপাতে তো স্টল দেবার প্রশ্নই নেই৷



      এখানকার আর একটা জিনিস খুবই ভালো লাগে৷ এখানকার মনে হয় শতকরা ১০জন নারী-পুরুষ স্থূলকায়, কিন্তু সাধারণ মানুষের মতোই কর্মক্ষম৷ ১০০/১৫০ কেজি বা ততোধিক ওজনের মানুষ এখানে রাস্তাঘাটে, মলে বা বাড়ির আশেপাশে প্রায়শই নজরে পড়ে, কিন্তু তারা ওই স্থূলতা নিয়েই স্বাভাবিক কর্মক্ষম৷ আমাদের দেশের মত অন্ধ মানুষ এখানে কদাচিৎ চোখে পড়ে৷ তবে বিকলাঙ্গ বা পঙ্গু মানুষ মাঝে মাঝেই নজরে পড়ে যারা ক্র্যাচ বা হুইল চেয়ারে রাস্তাঘাটে হামেশাই চলাফেরা করে৷ তাদের জন্য সর্বত্রই বিশেষ সুযোগ-সুবিধা৷ হুইল চেয়ার নিয়ে বাসে ওঠার বিশেষ ব্যবস্থা আছে৷ হাইড্রলিক পদ্ধতিতে বাসের প্রবেশ দ্বার পাটাতনের মতো রাস্তার সঙ্গে নেমে যায়৷ তার উপর দিয়ে সহজেই হুইল চেয়ার মানুষ সমেত বাসের মধ্যে ওঠানো যায়৷ ওদের কোনো ভাড়া লাগে না৷ প্রতিটি বাসে ওদের জন্য দু'টি আসন নির্ধারিত থাকে৷ রাস্তায় তারা যখন পারাপার করে তখন সব গাড়ি-ঘোড়া দাঁড়িয়ে পড়ে৷ আবার রাস্তা ছেড়ে ফুটপাতে ওঠার জন্য  রাস্তার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে ফুটপাত রাস্তার সমান্তরালে ঢালু করা আছে৷ যেখান দিয়ে সহজেই তারা ফুটপাতে উঠে যেতে পারে৷ আর ওইসব জায়গাগুলোতে অনেকটা জায়গা জুড়ে ছোট ছোট ডুমো ডুমো করা আছে যেখানে পা দিলেই অন্ধরা বুঝতে পারে ওখান দিয়ে ওঠানামা করতে হবে৷ ওই মানুষগুলোর জন্য সরকার বহুরকমের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে রেখেছে৷ ঠিক ওই মানুষগুলোর মতো Sr. Citizen বা বয়স্ক মানুষরাও এখানে নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করে৷ সরকারি বাসে তাদের অর্ধেক ভাড়া৷ এমন কি বিদেশিদেরও৷ কাউন্টারে ভাড়ার পয়সা ফেলার আগে শুধু মুখে বলতে হয় Sr. Citizen. কোনো ড্রাইভার আমাদের কখনও চ্যালেঞ্জ করেন নি বা বয়সেরাপ্রমাণপত্রও দেখতে চান নি৷ মানুষকে এখানে এতটাই বিশ্বাস করা হয়৷











আরও  পড়ুন 👇🏾👇🏾


https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/06/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_95.html


1 টি মন্তব্য: