বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব—১৩)।। পৃথিবীর উল্টো পিঠ।। বিশ্বেশ্বর রায়।। Ankurisha ।।E.Magazine ।।Bengali poem in literature ।।

 





ধারাবাহিক ভ্রমণকথা(পর্ব—১৩)

পৃথিবীর উল্টো পিঠ

বিশ্বেশ্বর রায়


আমাদের দেশে যে Highway বা Bye Pass আছে সেখানেও সাধারণ রাস্তার মতো অসংখ্য সিগন্যাল এবং ক্রশিং থাকে৷ ফলে গাড়ির গতি কমা-বাড়া হয় বা গাড়ি দাঁড় করাতে হয়৷ অবশ্য আমাদের দেশে এদেশের মতো এমন বিজ্ঞানসম্মত রাস্তা তৈরী করার প্রচুর অসুবিধা আছে৷ যা অসম্ভবের নামান্তর৷ তার প্রধান কারণ, আমাদের দেশে অতো বিপুল বিস্তৃত রাস্তা বানাবার মতো জমির অপ্রতুলতা৷ এদেশে মনে হয় মোট জমির পঁচিশ শতাংশই রাস্তা ও পার্কিং-এর জন্য ব্যয় হয়৷ সারা দেশটায় এমনই পরিকল্পিত রাস্তাঘাট৷ ফলে গতিবেগ প্রচণ্ডই বেশি, যা আমাদের দেশে কল্পনা করাই মুশকিল৷ কারণ, আমাদের দেশে রাস্তার জন্য মোট জমির পাঁচ বা ছয় ভাগ ব্যয় হয়৷ আর পার্কিং-এর জন্য আলাদা করে কোনো জমি বরাদ্দ করার বিলাসিতা অবাস্তব৷ তাই রাস্তার উপরেই পার্কিং৷ ইদানীং কয়েকটি মলে বা অফিস পাড়ায় ভূগর্ভস্থ পার্কিং-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নস্যি৷ ওখানে ওয়ালমার্ট, মল, মার্কেট এরিয়া, রেস্টুরেন্ট, কমপ্লেক্স বা ভ্রমণকেন্দ্রের সামনে বিশাল বিশাল পার্কিং লট আছে৷ জনসমাগমের নিরীখে পাঁচ-দশটি থেকে দু'তিন শ' গাড়ি পার্ক করা যায় সেখানে৷ অবশ্য বড় বড় মহানগর বা শহরের মধ্যে রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করার ব্যবস্থাও আছে৷

      এখানকার হাইওয়েগুলোর দু'ধারে অসংখ্য বিশাল বিশাল মহীরূহ আছে, অনুচ্চ গাছের সারিও বর্তমান৷ সেই গাছগুলো এতো ঘন সন্নিবদ্ধ যে, রাস্তার পাশে মাঠঘাট বা কোনো লোকালয়ও সচরাচর দৃষ্টিগোচর হয় না৷ কদাচিৎ কোনো জায়গায় এক ঝলক হয়তো দেখা গেল গম ক্ষেত বা সবজি ক্ষেত৷ ফলের বাগান বা গবাদিপশু এখনও পর্যন্ত নজরে পড়ে নি৷

      অ্যাকাডিয়া ভ্রমণের প্রথম দিন অর্থাৎ দশ তারিখ ভোরে Grey Hound Stn. থেকে বেরিয়ে আমরা Manhaton-এর রাস্তায় Time Squre-এর সামনে এলাম৷ সেই ভোরেও এখানকার বহু খাবারের দোকান, Macdonald ইত্যাদি খোলা৷ শোনা যায় টাইম স্কোয়্যার নাকি কখনও ঘুমায় না৷ আর এখানকার বহু দোকান তো বটেই বড় বড় শহরের বেশিরভাগ বন্ধ দোকানের ভেতর সারা রাত প্রচুর আলো জ্বালানো থাকে৷ এটাই এখানকার রীতি৷ বন্ধ দোকানের সামনের কাচের  দরজার মধ্য দিয়ে ভেতরের সবকিছু দেখা যাচ্ছে৷ এভাবে আলো জ্বালিয়ে রাখার কারণ হলো যদি কোনো দুষ্কৃতি দোকানের মধ্যে ঢুকে পড়ে তবে বাইরে থেকেই পুলিশ তাকে বা তাদের দেখতে পাবে৷

      এখানকার হাইওয়েগুলোর কথা কিছু আগে বলেছি, আরও কিছু বৈশিষ্টের কথা বলি৷ সব রাস্তাই ওয়ান ওয়ে৷ দু'পাশের রাস্তার মাঝখানে অনেকটা জায়গা নিয়ে ডিভাইডার বা বিভাজিকা আছে৷ সর্বত্র চার বা ছয় লেনের রাস্তা৷ কদাচিৎ আট বা দশ লেনের রাস্তাও চোখে পড়েছে৷ গাড়ি চলাচলের রাস্তা- সংলগ্ন দু'পাশে আরও একটি করে লেন আছে৷ তাকে সোল্ডার বলে৷ গাড়ি খারাপ হলে বা কোনো কারণে থামার প্রয়োজন পড়লে সেই লেনে গাড়ি দাঁড়ায়৷ অন্যথায় ওই লেনে গাড়ি চালাবার নিয়ম নেই৷ ওই লেন দু'টি অন্যান্য লেনের মতো মসৃণ নয়৷ খাঁজ কাটা কাটা থাকে৷ সেই লেনে হঠাৎ গাড়ি উঠে গেলেই বোঝা যায়৷ গড় গড় একটা আওয়াজ হয়৷ তখনই বোঝা যায় গাড়ি চলাচলের লেন ছেড়ে সোলডারে উঠে পড়েছে৷ এসব রাস্তায় কোনো স্টপেজ নেই, ক্রশিং নেই তা আগেই বলেছি৷ আর নেই কোনো ফুটপাথ৷ বস্তুতপক্ষে ওসব হাইওয়ের পাশ দিয়ে কেউ হাঁটেও না৷ আর রাস্তাগুলো এতো মসৃণ যে, কোনো ঝাঁকুনি, দোলানি বা লাফানি কিছুই নেই৷


      Tour Party-র পূর্ব নির্দেশ মতো সাতটার মধ্যেই আমরা ট্যাক্সি করে চায়না টাউনে পৌঁছে গেলাম৷ আমাদের কলকাতার চায়না টাউনের মতোই নিউইয়র্কের এই অঞ্চলটির নামও চায়না টাউন৷ এখানকার সব বাড়ি, দোকান ইত্যাদির মালিক সবাই চীনা৷ আর একটা কথা এখানে বলি—আমেরিকার সর্বত্র বেশিরভাগ Tour conduct করে চীনারা৷ কারণ, অন্যদের চেয়ে এরা অনেক সস্তায় Tour করায়৷


      এই ট্যুরের যাঁরা যাত্রী তাঁরা প্রায় সবাই নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছে গেছেন৷ বরং উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ তখনও এসে পৌঁছান নি৷ ফলে বাস ছাড়তে বেশ কিছুটা দেরী হল৷ সাড়ে আটটায় রওনা দেওয়া গেল৷ আমাদের প্রথম দ্রষ্টব্য মিসটিক অ্যাকোরিয়াম(Mistic Aquarium). বিশাল এক কাচের অ্যাকোরিয়ামে রাখা আছে এক জোড়া বিশালাকার সাদা তিমি(Beluga whale).মনে হচ্ছিলো কোনোভাবে যদি ওই কাচ ভেঙে যায় বা কোনার জোড় খুলে যায় তাহলে দর্শকরা সেই অ্যাকোরিয়ামের বিপুল জলের তোড়ে মুহূর্তে ভেসে যাবে বা ডুবে মরবে৷ ওই অ্যাকোরিয়ামের পাশে একটু দূরে একটা কৃত্রিম জলাশয়ে রাখা আছে প্রচুর পেঙ্গুইন৷


 অডিটোরিয়ামের(Auditorium) মধ্যে সুইমিং পুলের মতো একটি বাঁধানো জলাশয়৷ আমরা আরও প্রায় শতাধিক লোকের সঙ্গে টিকিট কেটে সেই অডিটোরিয়ামে ঢুকে গ্যালারিতে বসলাম৷ সেখানে শুরু হবে সি লায়নের(Sea Lion) শো৷ দু'জন মেয়ে নানা আকারের কয়েকটি সি লায়নকে দিয়ে নানা ধরণের খেলা দেখালো৷ অপূর্ব সেই দৃশ্য৷ জীবজন্তুকে পোষ মানিয়ে ভালোবেসে কী না করানো যায়!








আরও  পড়ুন 👇👇



https://wwwankurisha.blogspot.com/2021/06/ankurisha-emagazine-bengali-poem-in_38.html






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন