রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০

ধারাবাহিক বিশেষ নিবন্ধ। উৎসব- উৎস, বৈচিত্র্য, প্রভাব ও কার্যকারিতা (৭ম পর্ব) ।। পার্থ সারথি চক্রবর্তী

 



উৎসব- উৎস, বৈচিত্র্য,  প্রভাব ও কার্যকারিতা (৭ম পর্ব)

পার্থ সারথি চক্রবর্তী

 উৎসবের ক্ষেত্রে ভারতবর্ষ তার জাতি-ধর্ম-সংস্কৃতির বৈচিত্র্যের মতোই বৈচিত্র্যময়। একেবারে ষোলকলায় পরিপূর্ণ। ধর্ম ও ঐতিহ্যের সীমানা পেরিয়ে তা এক সামাজিকতার গন্ডি ছুঁয়ে যায়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ উৎসবকে এক নতুন মাত্রা প্রদান করেছে। যা সার্বিকভাবে মানবজীবনে তথা সমাজে এক উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে আছে। এক্ষেত্রে বাংলাও কোন অংশে পিছিয়ে নেই।

নববর্ষ-
 নববর্ষ বা পয়লা বৈশাখ বাংলা বর্ষের প্রথম দিন। অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিনটি। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গণেশ পূজো করা হয় ও হালখাতা উৎসবে মেতে ওঠে সারা বাংলা।

নবান্ন-
হেমন্তর শুরু থেকেই বাংলার সবুজ মাঠ সোনালি শস্যে রঙিন হয়ে ওঠে। এক অপূর্ব সাজে। অগ্রহায়ণের শুরুতে নতুন ধান কাটা হয়। চাষীর স্বপ্ন গোলাবন্দী হয়। আর গ্রামবাংলা মেতে ওঠে ' নবান্ন ' উৎসবে।

রাস উৎসব-
রাস পূর্ণিমায় শ্রীকৃষ্ণের রাসযাত্রা এক অতি জনপ্রিয় উৎসব। বাংলার বিভিন্ন স্থানে রাস উৎসব অতি ধুমধাম সহযোগে সম্পন্ন হয়। এদের মধ্যে কোচবিহারের মদনমোহন দেবের রাসযাত্রা এক বিশেষ উল্লেখের দাবি রাখে। প্রায় ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে মহারাজাদের শুরু করা রাস উৎসব আজো একই উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয়। এই উপলক্ষে এক বিরাট রাসমেলা আয়োজিত হয়। এককথায় উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ মেলা কোচবিহারের রাসমেলা। একে অবলম্বন করে সর্বধর্ম সমন্বয়ের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত গড়ে ওঠে। তার সঙ্গে এতদঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্পর্কও নিবিড়। 

রথযাত্রা-
পুরীর জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার রথযাত্রার আদলে বাংলার বিভিন্ন স্থানে রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। হুগলির মাহেশের রথযাত্রা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়াওও অনেক স্থানে রথযাত্রার সাথে সাথে মেলার আয়োজন হয়।

রমজান মাস-
চাঁদ ওঠার সাথে সাথে ঈদে সবাই মেতে উঠলেও, গোটা রমজান মাস জুড়েই উৎসবের আবহ জারি থাকে। আজকের দিনে অমুসলিমরাও মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়ায় এই মাসে। প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় ' ইফতার ' পার্টির আয়োজন করা হয়। হিন্দু- মুসলিম সংহতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণে এই রমজান মাস উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

 এরকম অনেক উৎসব সারা বছর ধরে চলতে থাকে উৎসাহ ও ভালবাসায় । এছাড়াও কিছু সামাজিক উৎসব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে সমাজজীবনে।

রবীন্দ্র জয়ন্তী- ২৫ শে বৈশাখ 
নজরুল জয়ন্তী- ২৪/২৫ শে মে
বিদ্যাসাগর জয়ন্তী-২৬শে সেপ্টেম্বর 
যুব দিবস- ১২ ই জানুয়ারি , স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন।
নেতাজী জয়ন্তী- ২৩ শে জানুয়ারি,  
নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন।
গান্ধী জয়ন্তী- ২রা অক্টোবর, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন ।
এরকম বহু মনীষীদের জন্মদিনও উৎসবের মর্যাদায় পালন করা হয়। 

তেমনি আরো অনেকগুলো উৎসব, যা জাতীয় ও স্থানীয়স্তরে পালন করা হয়-
স্বাধীনতা দিবস - ১৫ আগস্ট 
প্রজাতন্ত্র দিবস - ২৬ শে জানুয়ারি  ইত্যাদি।

সামগ্রিকভাবে মানুষ তথা সমাজজীবনের উপরে উৎসবের সর্বাত্মক প্রভাব ও কার্যকারিতা রয়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বিশেষ আলোচনার দাবি রাখে।

(চলবে)





---------------------------------------------------------------------------------     

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন