সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

ছড়া গুচ্ছ ।। মায়া দে

 


ছড়া গুচ্ছ

মায়া দে


১.

ঠাকুরমা-ঠাকুরদা 


বাবারমা ঠাকুরমা আর বাবার বাবা ঠাকুরদা

ঠাকুরমা খান দোক্তাপান আর ঠাকুরদা খান জর্দা।

ঠাকুরমা খান চা- বিস্কুট  ঠাকুরদাদার কফি

ঠাকুরমা যদি শোনেন মুকেশ ঠাকুরদা আবার রফি।

ঠাকুরমার মান্না দে ঠাকুরদার রশিদ খাঁন

ঠাকুরমার ইষ্টবেঙ্গল ঠাকুরদাদার মোহনবাগান।

ঠাকুরমা হাঁটেন গটগটিয়ে ঠাকুরদাদার লাঠি

ঠাকুরমা যদি এলেবেলে তো ঠাকুরদা পরিপাটি।

ঠাকুরমা ফোকলা দেঁতো ঠাকুরদার দাঁত দু-চার খান

ঠাকুরমার ফোকলা হাসি ঠাকুরদাদার আমফান।

ঠাকুরমা পড়েন আনন্দ বাজার ঠাকুরদা আবার বর্তমান

ঠাকুরমা হাঁটেন পুবদিকে তো ঠাকুরদাদা  পশ্চিমে যান।

ঠাকুরমার রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুরদাদার সুনীল

ঠাকুরমার পুলকবাবু ঠাকুরদাদার সলীল।

ঠাকুরমা আর ঠাকুরদাদার যতোই দ্যাখো অমিল

ভেতরে ভেতরে ভাব যে অপার অবাধ রসের দিল।




২.

ক্যারিয়ার  

সারাদিন পড়া পড়া

শাসন তাই খুব কড়া। 

রুটিন ধরে সময় করে

সমস্ত বিষয় তৈরী করে। 

যদি কিছুটা সময় বাঁচে

আঁকা খেলা গানে নাচে। 

এ সবেতে ও প্রথম চাই

নৈলে স্টেটাস বাড়বে  কৈ?

কম্পিউটারে বিশেষ জ্ঞান

থাকা চাই সমান সমান।

ফ্রেঞ্চ ল্যাটিন স্প্যানিশ ভাষা

অনর্গল তাই বলবে খাসা। 

তবেই তুমি উঠবে জাতে

সন্দেহ আর নেইকো তাতে। 

বন্ধু নেবে বেছে বেছে

বলবে কথা যেচে যেচে।   

ব্রাইট যতো স্কলার যত

তারাই হবে মনের মত। 

কিন্তু পিছিয়ে পড়া ছেলে

 এড়িয়ে যাবে অবহেলে। 

জীবন তাদের দেয় না কিছু

আঁধার শুধু  যে পিছু পিছু। 

তুমি হবে দেশের সেরা

চলবে মাথা করে উঁচু।।


৩.

লেখা -ঝোকা 



বাহ্ বা সতুরায়

হাতখানা কি লেখায়। 


পেন ধরে কাগজে 

ঠাসা যত মগজে। 


ফটাফট ছেড়ে দেয়

পটাপট লিখে নেয়।


খুক্ খুক্ কেশে কেশে

বিটকেলে হাসি হেসে।


গদ্য কি পদ্যে সে

হেঁটে চলে আরামসে। 


কি জাদু হাতে তার

ঠিক যেন   দই  ভাঁড়। 


চেটে পুটে যেন খাই

আরো দাও আরো চাই।


কিন্তুু সে বিদঘুটে 

লেখাগুলো উদ্ভটে। 


ধরে ধরে সে শোনায়

যদি কেউ না চায়। 


গাঁজাল গুঁজে মগজে

গোঁজাবেই গোঁজাবে। 


মাথা যদি বিগড়োয়

শুনে চোখ ঠিকরোয়। 


আচমকা  নাও মনে

হরি  সংকীর্তনে। 


বলো বলো হরি বোল

হেঁটে যায় যাক খোল। 


বেঁচে যাবে সেক্ষণে

দে ছুট প্রাণপনে।।



৪.

 নাক 



ভেবে দেখেছেন নাকটা নিয়ে বিষয়টা নয় মন্দ

রূপ রস আকার ও আছে সমস্ত রকম গন্ধ। 

তোমার বাড়ির হচ্ছে লুচি হয়তো তেলেভাজা

সুগন্ধি পায়েস তালের বড়া কিংবা ঘিয়ের গজা।

মাংস বিরিয়ানী বালাইষাট খিল দাও দ্বারে

কোন ফোকোর দিয়ে ছুটবে গন্ধ নাক জানতে পারে।



এবার ধরুন টয়লেট ঘেঁসে যাচ্ছেন তো বারবার

ধাক্কা খাবে নাকটা এবার উৎকট ঘ্রাণে জেরবার।

কোন গন্ধ যে কিসের থেকে নাকের প্রবল জ্ঞান

তেমন হলে নাকটি চেপে ধরে আঙুল দুখান।



এতো গেলো ঘ্রাণের ব্যাপার এবার নাকের আকার

রামুর দ্যাখো শ্যামুর দ্যাখো দ্যাখো বাবার কাকার। 

কারো নাক অতি উঁচু কারো আবার খাঁদা

ছুতোর মিস্ত্রি ইচ্ছে করে বুলিয়ে গেছেন রেঁদা।

কারোর নাক ঈষদ বেঁকা কারোর একটু ভোঁতা

নাকের জন্য হুতোম দেখায় কাউকে বা অভিনেতা।

এতো গেলো নাকের আকার এবার নাকের রস

লজ্জার কথা কি আর বলি নাক কি কারো বস?


সর্দি যখন ধরে নাকে  ঝরে শ্রাবণ ধারা

লোক লজ্জা যায় কি লুকোনো জানবে জগৎ সারা।

ঝেড়েই ফ্যালো মুছেই ফ্যালো রুমালেতে বারবার

মুছতে মুছতে ক্লান্ত হবে দেখ বেরোচ্ছে আবার। 

নাক তো আছে তোমার আমার থাকবে সেঁটে মুখে

নাককে নিয়ে গবেষণা কার কতো পাটা বুকে?




৫.

লক ডাউন



লক ডাউনে দেদার সুখ করোনা এলো বলে

মরছে বটে কতক কতক আমার তো যাচ্ছে চলে।


লক ডাউনে গান গাই লক ডাউনে হাসি

লক ডাউনে দেদার ঘুম খাচ্ছি সাজো বাসি।


লক ডাউনে যাই না কাজে ভাবি না কাউকে নিয়ে

যে যা পারছে করে মরুক আমায় ফাঁকি দিয়ে।


লক ডাউনে গাড়ি ঘোড়া সব তো এখন বন্ধ

দোকানদানি বাজার নেই মানুষের ও নেই ছন্দ।


লক ডাউনে ঘরে থেকেই ঘরের চাকর সবাই

থালা মাজছি ঘর মুছছি নৈলে কি আর রেহাই।


লক ডাউনে মানুষগুলো বন্দি যেন খাঁচায়

চিড়িয়াখানার পশু যেন কে আর কাকে বাঁচায়।


লক ডাউনে তবু ও আছি বহাল তবিয়তে

গরম জল খাচ্ছি  রোজ সাবান মাখছি হাতে।


লক ডাউনে মানুষ দেখলে ছিটকে ছ'হাত দুরে

জন্তু জানোয়ার দেখলেও তবু ভয়ে নাহি ডরে।


ভাবে ব্যাটা করোনা বাহী যেন না ঘেঁসে ধার

হ্যাচ্ছো ফ্যাচ্ছো যেন না করে ছোঁয় না খবরদার।।



---------------------------------------------------------------- 

এই বিভাগে মৌলিক ও অপ্রকাশিত লেখা পাঠান। 

মতামত জানান। 


ankurishapatrika@gmail. com

------------------------------------------------------------------              

   

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন