রবিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২০

ধারাবাহিক। বিশেষ নিবন্ধ।। উৎসব- উৎস, বৈচিত্র্য, প্রভাব ও কার্যকারিতা( পর্ব- ৪)- পার্থ সারথি চক্রবর্তী

 



উৎসব- উৎস, বৈচিত্র্য, প্রভাব ও কার্যকারিতা পর্ব- ৪
পার্থ সারথি চক্রবর্তী 

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজ্হা




মুসলমান সম্প্রদায়ের কাছে ঈদ এক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্য্যপূর্ণ উৎসব। এতে এক স্বতস্ফূর্ততা লক্ষ্য করা যায়। রমজান মাস পালন করার শেষে ঈদুল ফিতর পালিত হয়। ঈদুল ফিতরের অর্থ প্রত্যাবর্তন বা ফিরে আসা। পূর্বে এই দুটি পরবে মূলত লোকায়ত বিশ্বাসের প্রভাব বেশি ছিল,। পরবর্তীতে ধর্মীয় রীতিনীতি যুক্ত হতে থাকে। বর্তমানে এই উৎসবের মধ্যে আধুনিকতার রেশ চলে এলেও, এক সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমের ভূমিকা পালন করে আসছে। গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতি ঈদের উপরে অনেক প্রভাব ফেলছে। জানা যায়, মুগল যুগে আনন্দ ও উৎযাপন অনেকাংশেই উচ্চপদস্থ ও অভিজাত,  ধনী মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে তা সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চারিত হতে থাকে। আজকাল ঈদে অনেক মেলার আয়োজন হয়ে আসছে। এর প্রধান অঙ্গ বিশেষ খাওয়া-দাওয়া। খুব দরিদ্র মানুষের ঘরেও সেদিন পোলাও আর কোর্মার গন্ধ ম ম করে। সঙ্গে নানা রকমের পিঠা, সেমাই ও শিউলি বোঁটার রঙ মাখানো জরদা। ঈদের প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য ছিল ঈদ মিছিল। পরবর্তীতে ঈদের সাথে চাঁদ দেখা, মেলা ইত্যাদি অনুষঙ্গ যোগ হয়েছে।তিনদিনের ঈদুল আজ্হা পালনে কোরবানির ব্যবস্থা হোত। সামর্থ্য অনুযায়ী যে যার মতো কোরবানি দিত। ক'দিন আগে থেকেই পশু বেচাকেনার হাট বসে। খাসী ও গরুর পাশাপাশি উট ও দুম্বা কোরবানি দেওয়া হয়। সাধারন নিম্নবিত্তরা অবশ্য নতুন কাপড় কেনা, ভালো খাবার খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে বাধ্য হয় এই পরবকে।

     

               মুহররম






শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলিমরা জাঁকজমকের সঙ্গে মুহররম পালন করে থাকে। মুগল শাসকরা অনেকেই,  মুর্শিদকুলি খানেরাও মুহররমের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন বলে কথিত আছে। সিরাজউদ্দ্যোলা শিয়াদের জন্য ইমামবারা নির্মাণ করেছিলেন। কারো মতে হযরত আলির দু'পুত্র কারবালার যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেছিলেন। তাদের স্মরণেই এই শোক অনুষ্ঠান করা হয়। আবার হাসানকে বিষপানে মারা গিয়েছিল বলেও  শোনা যায়। প্রতিটি গ্রামে ' তাজিয়া ' মিছিল বের হয়। মুহররম মোটামুটি দশ দিনের অনুষ্ঠান। তবে প্রধান অংশ দশম দিনের অনুষ্ঠান। বিভিন্ন ইমামবারা থেকে বেরোনো তাজিয়া কালো কাপড়ে ঢেকে হুসেনী দালানে আনা হয়। মিছিলে থাকে সাজানো তাজিয়া, দুলদুল ঘোড়া,  নানা রঙের পতাকা। অগ্রভাগে লাঠি চালানো,  তরোয়াল খেলা। মুহররমের আরেক আকর্ষণ মেলা। মুহররমে শুধু মুসলমানরাই নয়, এক সময় হিন্দুরা ব্যাপকভাবে এতে অংশ নিতেন। মুহররমের অনুষ্ঠানের প্রধান উপাদান মর্সিয়া, ভাটিয়ালি ও জারি গান । ধর্ম নির্বিশেষে লোকসমাজে এসবের প্রভাব অনস্বীকার্য। গ্রামে মুহররমের কেন্দ্রে থাকে তাজিয়া।

বাংলা সহ সমগ্র ভারতে আরো কিছু পর্ব মুসলমানেরা পালন করলেও; ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজ্হা ও  মুহররম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

ভারতে মোট জনসংখ্যার একটা বিশেষ অংশ খ্রিস্টান। তাদের পালিত উৎসবগুলোর মধ্যে বড়দিন  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয়।


                 বড়দিন 




যীশুর জন্মদিন গোটা বিশ্বে সাড়ম্বরে পালিত হয় বড়দিন হিসেবে। এই উৎসব এক দিনের হলেও এর ব্যাপকতা অনেক। গির্জায় গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা, আহার ও উপহার বিতরণের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বর্তমানে অ-খ্রিস্টানরাও ব্যাপক হারে এতে অংশগ্রহণ করে। কেক খাওয়া এই অনুষ্ঠানের এক বিশেষ অঙ্গ।  কলকাতায় বড়দিন এখন এক প্রধান উৎসবে পর্যবসিত। গোটা বিশ্বের নিরিখে বড়দিন তর্কাতীতভাবে বৃহত্তম উৎসব।

এছাড়া ইস্টার এক গুরুত্বপূর্ণ উৎসব।

এছাড়া ভারতের বিভিন্ন স্থানে আরো অনেক ছোটবড় উৎসব বা পর্ব পালিত হয়। সেগুলো প্রচারের আলোয় তেমন আলোকিত না হলেও গুরুত্ব বা তাৎপর্য্যের দিক থেকে কিছু কম নয়।

(চলবে)
----------------------------------------------------------------------------------------
মতামত আপনার  একান্ত কাম্য। 
ankurishapatrika@gmail. com

-----------------------------------------------------------------------------------------                

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন