শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০

সৌমিত্র সংখ্যা ।। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় (স্মরণে ও মননে) নিবেদিত অঙ্কুরীশা-র কবিতাঞ্জলি।। Ankurisha।। E. Magazine।। Bengali poem in literature।।

 


সৌমিত্র সংখ্যা 

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়  স্মরণে ও মননে

 নিবেদিত কবিতাঞ্জলি


সম্পাদকীয় 🙏

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এমন একজন অভিনেতা, যিনি রূপালি পর্দার বাইরে রূপকথার নায়ক হয়ে  উঠেছিলেন।তিনি যখন কবিতার আবৃত্তি করছেন,মনে হল, এ-ই তো বাঙালির উচ্চারণ। তিনি যখন কবিতা লিখছেন,পড়ে মনে হল,এই তো দুঃখবরণের আরও একটি রাস্তা। তিনি যখন পত্রিকা সম্পাদনা করছেন,তখনও তাতে একটি ছাপ ছেড়ে দিচ্ছেন আবার যখন সমাজ- সংসার নিয়ে গদ্য লিখছেন বা বক্তব্য দিচ্ছেন, তখন মনে হল,যেসব চরিত্র আমরা পর্দায় দেখলাম, তা যেন সত্যিকারের অভিনেতা।  তাই একজন অভিনেতার উর্দ্ধে কবি,কবির উর্দ্ধে বাচিক শিল্পী সর্বোপরি একজন খাঁটি বাঙালি হিসেবে কিংবদন্তি। তাঁকে ভুলে যাওয়া মানে একটি অধ্যায়কে ভুলে যাওয়া,যা বাঙালির সোনালি আকাশ। তাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনে নবীন থেকে প্রবীণ,সকল সৃষ্টিশীল সত্তাধারীরা এসে মিশেছেন অঙ্কুরীশা-র কবিতাঞ্জলিতে।  সকলকে অঙ্কুরীশা-র  পক্ষ থেকে জানাই সাদর আমন্ত্রণ।       



সূচিপাতা

জ্যোতির্ময় দাশ
গৌতম হাজরা
সুস্মেলী দত্ত
রবীন বসু
মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি
অমিত কাশ্যপ
অশোককুমার লাটুয়া
শুভঙ্কর দাস
বিমল মণ্ডল
দেবাশীষ মুখোপাধ্যায় 
রঞ্জন ভট্টাচার্য
শুভ্রাশ্রী মাইতি
জগদীশ মন্ডল  
তপন কান্তি মুখার্জি
বিকাশ ভট্টাচার্য
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় 
বন্দনা কুণ্ডু
পবিত্র প্রসাদ গুহ
ইলা সূত্রধর
সুব্রত মন্ডল
অশোক রায়
শ্রীমতি ডলি
অলোক চট্টোপাধ্যায়
দীপক বেরা 
শ্যামলী বর্ধন
অমরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী
নৃপেন্দ্র নাথ মহন্ত
মানিক কর্মকার
বিপ্লব প্রামাণিক
অমল কুমার ব্যানার্জি                               
অর্পিতা ঘোষ পালিত




প্রার্থনার নিষ্ফল আর্তনাদ... 
জ্যোতির্ময়  দাশ 

অভিনয় শেষ  হলে জানি নেমে আসবে
একসময়ে অবিসংবাদী যবনিকা 
তবু  দর্শকের  আসনে অপেক্ষায়  থাকে
আমাদের  অতৃপ্ত  প্রত্যাশার মন
মৃত্যুর  সঙ্গে  সাঙ্গ  হল তিনপাত্তি খেলা 
চলে গেলে একভুবন থেকে আর একভুবনে—
মহাকালের  অমোঘ মুঠো থেকে এনেছিল ছিনিয়ে
জীবনের  পরিপূর্ণ  ঝুলি—তবু কষ্ট  হয়...

ভেসে যায় আমাদের  প্রার্থনার নিষ্ফল
আর্তনাদ  ভবিতব্যের নিষ্ঠুর আকাশে 

আর আমি, আমরা বসে থাকি অনন্ত মৃত্যুর
মিছিলে বিচ্ছিন্ন  দ্বীপের  মতো  বিপন্ন নির্জনে...


আইকন

গৌতম হাজরা  

কখনও কখনও মনে হয় কিছু না বলাই ভালো। 
আবার কখনও কখনও মনে হয় তাকে নিয়ে
                      কিছু কথা বলা যেতেই পারে, 
যে মানুষটা এইমাত্র চলে গেল ওঁ শান্তি, অনন্ত ওপারে। 
গেল। কিন্তু রেখে গেল অনেক ঘটনা
সিনেমা, থিয়েটার, সাহিত্য, কবিতা, আবৃত্তি আরও কত কিছু
                      যা এখনও রয়েছে অজানা। 
মানুষ কী এভাবে যায়? এই তবে ভবিতব্য কথা? 
মানুষটা গেল, কিন্তু রেখে গেল অনেক করুণ ব্যথা! 
ভাবি, যে মানুষটা আজও অপু হয়ে গেঁথে আছে দর্শকের মনে, 
সেই-ই ফেলুদা হয়ে রয়ে গেছে রহস্য অঙ্গনে। 
আসলে টলেনা কিছুই তিনি যে গুনী, অমায়িক, ভদ্র, মিশুকে
তাইতো সবাই আজ মিশে গেছে অন্তিম পর্বের দিকে। 
শূণ্যতা। শুধুই শূণ্যতা। দিকে দিকে হাহাকার ধ্বনি
আসলে তিনি যে ছিলেন আমাদের আইকন, নয়নের মনি! 




নক্ষত্র কথায়

সুস্মেলী দত্ত

 

মৃত্যু নয় মৃত্যু নয় নতুন রূপে রাজা

বাইরে ঘরে হীরক দ্যুতি আগুন সাজে সাজা

 

অপুর চোখে কালো সাদায় কাজল পরা মেঘ

বঙ্গবাসী সাতকাহনে বিরহী সংক্ষে

 

মহীরুহের সবুজ ত্বকে নিত্য আনাগোনা

যাপন সুখে যাপন দুখে উল্টো সোজা বোনা

 

বুক বাজানো ফেলুর সুতো লাটাই ধরা কে 

জ্ঞানপাহাড়ি বুদ্ধি ধোঁয়া একটু থেমে যেও

 

দীর্ঘদেহী সৌম্যবেশে ইতিহাসের পাতা

বসত করে সেই দেবতা স্নিগ্ধ আবিলতা

 

মরণজয়ী কাব্যিকথা লেখনী ক্ষুরধা

চাটুজ্জে সে মিত্রবাবু প্রণাম বারে বার|



অপরাজেয় পথিক

রবীন বসু


স্মিত হাসি নিয়ে ভোর ফুটে উঠল

তুমি শুধু ফুটলে না।

বাগানে ছড়ানো রোদ 

তোমার হাসির মত অমলিন

কল্লোলিনী কলকাতা আজ বিষাদে নিমগ্ন

তোমার চেনা শহর, স্টুডিও পাড়া

প্রিয় সেই কফিঘর, বইপাড়া

বন্ধুদের হুল্লোড়েই তর্ক-বিতর্ক

ম্লান চেয়ে আছে যেন নির্বাক…

দূরে রেলিঙে হেলান দিয়ে মায়াচোখে

সিগারেট টানছো, অপু...

অনন্ত জীবনপথে আজ শুধু দোল খায়

মৃত্যু, যেন ভাসমান সাঁকোর ওপারে

সব স্বপ্ন, জয়-পরাজয়, লড়াইয়ে স্থির হয়।

এই সব অফুরন্ত তারার বিস্তারে

মহাশূন্য মাঝে

অগ্নিশুদ্ধ তুমি শুধু অপরাজেয় পথিক…



মরণজয়ী সৌমিত্র

মঙ্গলপ্রসাদ মাইতি

 

লড়াইটা তোমার কাছে ছিল বেদমন্ত্রের মতো-

সেই লড়াইটাই জীবনভর উচ্চারণ করে গেলে;

শেষ চল্লিশ দিনের লড়াইটা ছিল আরো অভূতপূর্ব

মনে হল মৃত্যুও বুঝি তোমাকে ভয় পেয়েছে!

আমরা দেখলাম-কি অদ্ভুত তোমার জীবনীশক্তি

যা রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। মৃত্যু এসে 

একসময় তোমাকে আলিঙ্গন করল ঠিকই ততদিনে

তুমি তাকে জয় করে নিয়েছ।

সশরীরে নেই কিন্তু বুকের গভীরে এমন এক

জায়গা করে নিয়েছ মনেই হচ্ছে না তুমি নেই।

আকাশ বলছে তুমি আছো, নদী বলছে তুমি

আছো, পাহাড়-সাগর, তরুলতা-গাছপালা, মাঠ-

বন-প্রান্তর সবাই জানান দিচ্ছে তোমার হাস্যময়

অস্তিত্ব। সৌমিত্র, তোমার জন্যই আমরা বাঙালিরা

সগৌরবে বলতে পারছি আমরা অবহেলার পাত্র

নই, মরণকাল পর্যন্ত লড়ে যেতে পারি।

 

ভেসে যেতে পারি
অমিত কাশ‍্যপ
( সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের 'এত বড় নদীর একগলা জলে' কবিতাটিকে মনে রেখে )


 'এত বড় নদীর একগলা জলে 
আমাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে 
যখন স্তব উচ্চারণ করতে বলেছিলে
তখন কি ভাবোনি
আমি ভেসে যেতে পারি'

একগলা জলে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলি-
ওঁ জবাকুসুম সঙ্কাশং কাশ‍্যপেয়ং মহাদ‍্যুতিম্
পায়ের পাতায় মাটি, জলের ছলাৎ ছলাৎ 
বহু দূর থেকে নদীর স্রোত নামিয়ে দেয়
নীচে আরো নীচে, শীতল জলরাশি ছোঁয়
গঙ্গার স্তব খান খান হয়ে দিগন্তে মেশে
আমি তবে ভেসে যেতে পারি 

মৃত্যুভয় দোলা দেয়, মৃত্যুভয় সামনে দাঁড়ায়
আমি কি তবে চোখে চোখ রেখে কথা বলি
প্রবল হাওয়া বয়, প্রবল কষ্ট ভয়
ভেসে যেতে, ভেসে ভেসে আর  এক কূল
অপেক্ষায় থাকে, স্তব মনে করি--
ধ্বান্তারিং সর্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরম্




শেষ নেই শেষের কবিতার 
  অশোককুমার লাটুয়া 

বিকলাঙ্গ সময়। বেদনায় ভিজে গেছে কান্নার পদাবলী। 
স্তব্ধতার সেতু ছুঁয়ে হেঁটে গেছে অদ্ভুত হৃদয়। 
নামজীবন আজ মহাপ্রস্থানে 
মহাজীবনের গল্প অফুরান 
কিংবদন্তি নক্ষত্রের মৃত্যুহীন আলোর সংলাপ। 
চরিত্র থেকে চরিত্রে আশ্চর্য যাতায়াত। অপু থেকে কিংলিয়ার পোশাক বদলাতে বদলাতে বাস্তবের মাপসই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় 
সমান স্বচ্ছন্দ অজস্র নামভূমিকায়। 
ছিয়াশিটি বসন্তের রোদ ও রাত্রি 
অনেক যুদ্ধে পরাজিত শেষের কবিতার কন্ঠস্বর তবু আজ অপরাজিত স্মৃতি। 
ঝিন্দের বন্দী থেকে নিশিপদ্ম নিয়ে প্রণয়পাশায় 
 বুকের নদীতে তোমার আশ্চর্য র্সাঁতার
গুণে রেখেছি গঙ্গার উথাল-পাথাল ঢেউ 
উচ্চারিত শব্দের চলচ্চিত্রে বিস্মৃতিবিহীন নমস্কারে। 




সৌমিত্র 
শুভঙ্কর  দাস

বাঙালি শব্দটার মানে অভিধানে কী বলছে?
যারা বাংলা ভাষায় কথা বলে!
যারা বঙ্গদেশে বাস করে!
কারা?
তারাই,যাদের অরণ্য উচ্চারণে সুন্দরবনের গন্ধ বা সমুদ্র বললে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ ভেসে ওঠে...
যাদের সোনার শিখর মানেই কাঞ্চনজঙ্ঘা আর তিলোত্তমা বললেই কলকাতার পদধ্বনি শোনা যায়..
তারাই বাঙালি...
প্রেমিক অপুকে কেমন দেখতে?
প্রতিবাদী ক্ষিদ্দা কেমন কথা বলেন!
গোয়েন্দা ফেলুদা বই থেকে কার মধ্যে উঠে আসে?
ঠিক বাঙালির মতো!

যদি কোনোদিন দেখা যায়,বাঙালি শব্দের স্থানে সৌমিত্র বসিয়ে দেয়

তা হবে কবিতার মতো সত্যি।


মৃত্যুর পরেও
বিমল মণ্ডল


দু'পাশে অভিভাবকভাসি জনপদ;শুধু ভালোবাসা
সামনে-পেছনে সুসজ্জিত চলচ্চিত্র পট
মাঝখানে সুললিত ফুলের সুবাস ঘেরা শরীর

রাজপথ জুড়ে আকীর্ণ গোধূলি বিকেল
তোমাকে ব্যথিত মুখে   চুম্বন করে ফেরে

আলোচনা ও সমালোচনার অভিনন্দন ঝড়
অভিনেতা ও কবি উজ্জ্বল পরিচিতি
যেন একটা  মৃত্যুর পরেও... 




  রক্ত আলপণায় পিঁড়ি পাতা
   দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

পড়ে আছে চন্দনের চিতা
মৃত্যু নত:শির
বিস্ফারিত বিস্ময়ে অশ্রু ঝরার দর্শক
চোখের ছিটকে পড়া মুক্তো গুলোর হীরক দ্যুতি
অশ্রুসিক্ত রজনীগন্ধার শেষ কপাল চুমু

কোথায় যাবে তুমি
মিলিয়ে যাবে দিকচক্রবালে
ধ্রুবতারার পাশে আলো মানুষ
কিন্তু মনাকাশে তো তোমার স্থায়ী ঠিকানা
সেখানে তুমি অহর্নিশ
ক্ষিদ্দা হয়ে ফাইট কোনি ফাইট
ফেলুদার মগজাস্ত্রের শানিত  বুদ্ধি
আটপৌড়ে জীবন মাখা অপুর আবেগ খাওয়া
লড়াইয়ে উদ্দীপ্ত উদয়ন পন্ডিতের আগুনগোলা
 অথবা সুললিত গলায় বসন্ত নয় অবহেলায়


কোথায় যাবে তুমি 
যে পথে জীবনের নিত্য যাওয়া
হীরক দ্যুতি ছড়িয়ে সেই পথে
তুমিও তো সাথী আমাদের মরণের ওপার থেকে
জানা অথবা অজানায়



নক্ষত্র পতন
রঞ্জন ভট্টাচার্য 

কত তারকা আসে 
নক্ষত্রলোক থেকে 
আবার বিলীন হয়ে অন্য কোন লোক 
রেখে যাওয়া স্মৃতি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকে 
হৃদয় হৃদয় ...
তাঁর সংলাপ কথা চারিত্রিক দৃঢ়তা একাগ্রতা 
দোলা দেয় মনে প্রাণে অন্তরে 
যেন এক গগনচুম্বী নির্মাণ ।
বহু নক্ষত্রের সংগৃহীত রূপ রূপময়তা দিয়েছে
এক অরূপ রতন ,
সেখানেই মান্যতা 
সেখানেই মিলন প্রাণের কথন 
আর এখানেই বাঙ্গালীত্বের বাঁধন।

একটি জানালার গল্প
শুভ্রাশ্রী মাইতি

একটা খোলা জানালা ছিল আমাদের এই অপুর সংসারে।
হাওয়ায় হাওয়ার রোজ ভেসে আসত আশ্চর্য সব আলোর খবর।
ফুল খসে পড়া তাপিত দিনগুলোতে জানালা গলে আসত দক্ষিণের প্রাণখোলা হাওয়া। 
ঠিক যেন উদয়ন পন্ডিত--হাতে ধরে শেখাত দিনবদলের নতুন নতুন কবিতা।
আমাদের ক্ষুধার্ত পর্ণমোচী সন্ধ্যাগুলোয় জানালার ফাঁক গলে
খিদ্দা এনে দিত আগুন জ্বালানোর খুঁটিনাটি উপকরণ।
নিভন্ত উনুনে লড়াই-এর আগুনটা দাউদাউ করে জ্বলে উঠলেই
টগবগ করে ফুটিয়ে নিতাম বেদন চালের স্বপ্নরঙা ভাত।
আমাদের কাপড়ের বল আর ডাংগুলি খেলার রঙীন দুপুরগুলোতে জানালার পাশে বসে
ফেলুদা এসে শিখিয়ে যেত মগজাস্ত্রে শান দেওয়ার রকমারি সব কৌশল।
জাফরিকাটা জোছনায় প্রায় রাতে ভাঙাচোরা ঘরটা যেন এক আলো-আবহের রঙ্গমঞ্চ--- 
গমগমে গলায় কিং লিয়র শোনাত জানালার গরাদগুলো,পাশে গীতবিতান আর আবোলতাবোল।
শিশিরভেজা শিউলিসকালে জানালায় টোকা পড়লেই বুঝতাম---
বাক্স প্যাঁটরা গুছিয়ে অপু এসেছে আমাদের ডাকতে
কাশরঙা মাঠের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাবে আশ্চর্য এক অপরাজিত অভিযানে।

এখন এখানে অন্ধকার বেশ ঘন। সাঁঝবাতির শুকতারা ঘুমিয়ে গেছে অসুস্হ বিষণ্ণতায়।
 মৃত্যুর শীতল ছায়াপথ পেরিয়ে এক নক্ষত্রভূক অগ্নি জ্বলে উঠেছে মহাশূন্যের সীমানায়---
আলোকবর্ষী দূরত্ব পেরিয়ে সূর্য তার সপ্তাশ্ব রথ ছুটিয়ে আসবে বলে
জানালাটা হাট করে খোলা রাখি বিনত বিশ্বাসে
সূর্যসন্ধানী কণিকাগুলো কথা বলে যায় আমাদেরই রক্তরসে... 

মহান শিল্পী
জগদীশ মন্ডল

মহান শিল্পী অভিনয়ের 
দক্ষ কারিগর,
বলছি শোন সৌমিত্র চট্টের
আর কি কি গুণ তাঁর।

আলোর লেখক,আবৃত্তিকার
নাটক দিয়ে মোড়া,
সচল কলম সম্পাদনায়
নামটি ভারত জোড়া।

নিরহঙ্কার মিশুকে মানুষ
অনুবাদেও পাই,
অপু দিয়ে জীবন গড়েন
ফেলুদার তুলনা নাই।

কবিতা প্রাণ জীবন নদী
মানব হৃদয় জয়ে,
ছোট্ট পুলু কিংবদন্তি
মুগ্ধ অভিনয়ে।

সত‍্যজিতের মানসপুত্র
উজ্জ্বল ধ্রুবতারা,
তাঁর মহিমা জ্বরে কাড়ে
হলাম মানিক হারা।



দীর্ঘশ্বাস
তপন কান্তি মুখার্জি 
  

ভেবেছিলাম তুমি ঠিকই ফিরে আসবে । 
মগজাস্ত্র খাটিয়ে মৃত্যুকে তুড়ি মেরে আবার সদর্পে 
হেঁটে বেড়াবে আমাদের আঙিনায় । 
হলো না । মাড়োয়া বেজে গেল আয়ুবীণায় , 
সব কথা থেমে গেল অভাগা অবেলায় । 

এখনও চোখে ভাসে তোমার যাপনবেলা , 
আংটির পাথরের মতো জ্বলজ্বলে আত্মবিশ্বাস ।
সবই আছে , নেই শুধু স্বপ্নে স্বপ্নে ভাসার উচ্ছ্বাস।
মৃত্যুকাঁধে সগর্বে ঢুকে গেলে আগুনে , 
হীরকরাজকে কে নামাবে ধরাসনে ? 

অতীত ভেঙে ভেঙে জমা হচ্ছে স্মৃতিতে । 
জীবন খুঁটছে নিঃসঙ্গ নিঃস্বতা , 
জীবন খুঁড়ছে ক্লান্ত শোক । 
হাতমুঠো করে হাসিমুখে জানালে আলবিদা , 
কোথায় গেল সেই ফাইটিং স্পিরিট খিদ্দা ? 



 সবুর করো ভাই
 বিকাশ ভট্টাচার্য    

পরোয়ানা হাতে নিয়ে এসেছো
একটু সবুর করো ভাই 

তারপর দীর্ঘ সময় গেল সদরের
চৌকাঠ থেকে শয্যার পাশে
পৌঁছুতে 

দূরত্ব? সে তো এক মন থেকে অন্যমনের 
জড়ঘুম থেকে নদী যে ব্যবধান নিয়ে 
পাশাপাশি বয়

একদিকে অবিনাশী মৃত্যু 
আর অন্যদিকে সহস্র প্রার্থনায় ভিজে 
হৃদিশতদল 

পোশাক বদলাবনা আর। এবার 
প্রকৃত পোশাকে আজন্ম ঘর ছেড়ে যাব



           বিবেক
  সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় 

কি অসীম যন্ত্রণায় বিদ্ধ হতে তুমি ,
তুমি-ই  ব্রাত্য ছিলে উৎসবে একদিন
তবু হয়ে উঠলে অনন্য ইস্পাতকঠিন
চড়া দাম ছিল শিল্পীর,
মেরুদন্ড বিক্রির বাজারে বারেবারে,
অবিকৃত রইল মেরুদন্ড এই খেলাঘরে।
সুমিত্রা-নন্দন যেন তুমি,
জীবন যুদ্ধে ভারাক্রান্ত তার দেহ
পাড়ি দিলে অন্য লোকে ছেড়ে  সব মোহ ।
মৃত্যুতে নির্বাক বহু শ্রোতা,
তোমার মহিমায় থাকবে তুমি দীর্ঘপথে
সম্মান শ্রদ্ধা দেখি এখন তোমার স্বর্গরথে।

চার লাইন
 বন্দনা কুন্ডু

বিশের বছর বিষে বিষেই ভরা
কত জ্ঞানী,গুনী হলেন গত
মানবজীবন ফুরিয়ে যাওয়াই রীতি
পড়ে থাকে বিষন্নতার ক্ষত।

একে একে নিভলো কিছু তারা
তুমিও গেলে তাদের পিছে পিছে
দানের ভাঁড়ার শূন্য হবার নয়
বরং সে সব হিসাব করাই মিছে।

দেহ তোমার মুক্তি পেলো আজ
অমরত্ব রইলো ধরায় পড়ে
দিনের মাঝে রাতের তারা থাকবে তুমি বাঙালির ঘরে ঘরে।।




   সৌমিত্র স্মরণে
পবিত্র প্রসাদ গুহ


কাশের ঝোপের পাশের ট্রেন লাইন দিয়ে
কু উ উ....... ঝিক ঝিক ঝিক ঝিক
কালো ধোঁয়া উড়িয়ে চলে গেল ট্রেনটা
অপু দুর্গা উদাসী মনে বিস্ময়ে তাকিয়ে!
তুমি রয়ে যাবে মোদের হৃদয়ে পরিবারের অপু হয়ে।
আজ বেলা শেষে-র কান্না ভেজা অশ্রু
বলে ওঠে যেও না, তুমি যেও না চলে,
ফেলুদার লড়াই আজ শিশির বিন্দু হয়ে
ঝরে পড়বে হেমন্তের ধানের শীষে।
বাচিক শিল্পীর বাচিকতা, কলমের ছোঁয়ায় কবিতারা আজ খোঁজে -
চেনা অমলিন স্নিগ্ধ হাসির ঘ্রাণ ।
কল্পনার পরীরাও হয়ে উঠেছিল জীবিত 
তোমার আবৃত্তির ছন্দে!
মেঘ বালিকাদের হিল্লোলিত লুকোচুরি খেলাও 
আজ আবৃত্তির ছন্দের অভাবে স্তব্ধ ।
নীরবে কাঁদে রুপোলি পর্দা,
ভেসে আসে ছোট পর্দার অভিভাবক হারা ক্রন্দন।
তুমি সব্যসাচী, তুমি অনন্য, তুমি শিল্পী
শিল্পের স্রোতে বহমান তোমার প্রতিমূর্তি।



স্বপ্নকে তাই মৃত্যুঞ্জয়ী বলে
ইলা সূত্রধর 

নিভে গেল সেই প্রদীপের শিখাটুকু
পড়ে থাকে কিছু স্মৃতিতে আলোর রেশ
খাঁচা ভেঙে দিয়ে চলে যায় প্রাণ পাখি 
আকাশের গায়ে উল্কা পতন ঘটে 

বেঁচে থাকে রোজই শিল্পী কুশীলব
কবি হেটে যায় মননের স্মৃতি পথে
না ফেরার দেশে দিগন্ত পারাবার 
মৃত্যু মানেই মায়াবিক শূন্যতা

সৌম্যকান্তি উদার জোছনা আলো
সৃজনশীলতা উজ্জল করে ছিলে
নক্ষত্র জ্বলে ভিড়ে ঠাসা নীহারিকা 
পটভূমি রাখা বার বার ফিরে আসো

প্রগতি কন্ঠে ক্ষিদ্দার সফলতা
কোনির লড়াই ছুটন্ত এক ঘোড়া 
ইথারে ভাসছে অনন্ত শ্বাশত
স্বপ্নকে তাই মৃত্যুঞ্জয়ী বলে



 
সৌমিত্র-এর স্মৃতিতে
সুব্রত মন্ডল


আপনি চলে গেলেন;
আর কোনোদিন কবিতা শোনা যাবেনা আপনার কন্ঠে,
আপনার রেলগাড়ি আর থামবে না কোনোদিন
এই পৃথিবী নামক স্টেশনে ৷
রেশমের কালো শাড়ি পরে রেলে উঠবে না কেউ,
সে ও জিজ্ঞাসা করবে না আর,
"আমাদের গেছে যে দিন, একেবারেই কি গেছে?
কিছুই কি নেই বাঁকি?"
আপনিও আর খানিক চুপ থেকে বলবেন না,
"রাতের সব তারাই আছে দিনের আলোর গভীরে ৷"

আপনি চলে গেলেন;
চলে গেলেন আর ফিরবেন না বলে,
আর ফিরে তাকাবেন না বলে ৷
যেকোন ভাবে যে কেউ আপনাকে ডাকলেও
বলবেন না,"ওই রকম করে কেন ডাকো আমায়?"
আর না বলেই আপনি হারিয়ে গেলেন,
মৃত নদীর মতো শীত গায়ে নিয়ে আপনি দূরে সরে গেলেন ৷
কিন্তু আমরা, আমরা তখনও দেখেছিলাম, শুনেছিলাম, পড়েছিলাম;
এখনও দেখবো, শুনবো, পড়বো
সৌমিত্র! সৌমিত্র চ্যাটার্জী...




সৌমিত্র - একটি যুগের অবসান
অশোক রায়

একটি একটি করে পাতা ওলটায় স্মৃতির সমীর       

ছয় দশকের সৃষ্টির শেষে থামল জর্জরিত শরীর

যাবার পথে চল্লিশ দিন ব্যাকফুটে খেলেছ পা না বাড়িয়ে

অবশেষে ঘটল যবনিকা পতন আশার প্রদীপ নিভিয়ে

তোমায় কি মানায় সাদা বর্ণহীন মালায় নিথর শয়ন

সেলুলয়েডের ঘোড়ার পিঠে যে ছিল রাজপুত্তুর ময়ুরবাহন

ফেলুদার রোলে যে সবসময় একশোয় একশো

তাকে যখন দেখি হার্স-ভ্যানে ক্লান্ত শ্রান্ত মুখ পাংশু

কি করে মেলাই হিসাব ধুসর পান্ডুলিপির গহীন

তোমায় ভালোবেসে আমরা হলাম শোকার্ত ভাগ্যহীন

অনেক হয় নি দেরি তবু আজ দীর্ঘপথের অন্তে দেখি

ফাইটার খিদ্দা-র বাঁচার অদম্য ব্যাটন দিল মহাকাশে পাড়ি

মুহরত লাইট সাউন্ড সত্যজিতের স্ক্রিপ্ট রেডি...

                                             


শ্রদ্ধাঞ্জলি
 
শ্রীমতি ডলি    

হেমন্তের ভারাক্রান্ত একাকী দুপুরে,
অসীম-অনন্তপানে চিরতরে -
চলে গেলে 'অপু', বিশ্বসংসার ছেড়ে।
রেখে গেলে সযত্নে সোনায় মুড়ে -
শ্লাঘনীয় সৃষ্টি রূপোলী পর্দা জুড়ে !
বহুমুখী প্রতিভায় উজ্জ্বল -
মহিমান্বিত করেছো আপনারে !

মৃত্যু'র সাথে খেলতে চেয়েছিলে 'তিনপাত্তি',
নশ্বর দেহ ছিনিয়ে নিয়েছে মৃত্যু, এ অমোঘ সত্যি !
জুয়ায় হেরে গেছে মৃত্যু, পারে নি তোমায় নিতে,
তোমার কীর্তির গাঁথামালায়, তুমি উন্নীত অমরত্বে !
ক্ষিদ্ দা  ফেলুদা  সন্দীপ  যে নামেই ডাকি,
মঞ্চের  'কিং-লিয়র'কে  সবের উর্দ্ধে  রাখি।

চিরকাল এভাবেই রয়ে যাবে মানবের চিত্তাকাশে !
প্রণমি তোমায়, শান্তিতে ঘুমোও চিরপ্রশান্তির দেশে !!


স্মৃতি 

অলোক চট্টোপাধ্যায়

স্মৃতির ঘরে অনেক ছবি , রঙিন, সাদা কালো
সব চরিত্র জীবন্ত হয় অসীম মনস্বীতায়।
সব কবিতা প্রান খুঁজে পায় নিবিড় উচ্চারণে
গভীর মনন জ্বলে ওঠে নেভা চন্দন চিতায়।

মুক্ত পাখা অসীম খোঁজে, স্মৃতি লাটাই গোটায়
সৌমিত্র বেঁচেই থাকেন মনের মণিকোঠায়।


অমরসঙ্গী

দীপক বেরা



অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক,নাট্যকার 
লেখক, কবি, সাহিত্যিক, আবৃত্তিকার
কী নামে ডাকব তোমায়?
এত ভাবে, এত রূপে ধরা দিয়েছ তুমি
পঁচাশিতেও তুমি থেকে গেছ আঠারো
যেন বিস্মিত এক চিরতারুণ্য কথা বলে ওঠে! 

দরজার পাশে কান পেতে শুনি 'অপু আড্ডা' 
'ফেলুদা'র গোয়েন্দা কাহিনী শুনতে শুনতে 
চলে গেছি 'হীরক রাজার দেশে'.. 
মঞ্চে তোমাকে ঘিরে সমাপ্তির 'মৃন্ময়ী' 
কোথায় না আছ তুমি? 
কত যে শাখা-প্রশাখা তোমার, কুল-কিনারা নাই! 
বহুজন্মের অনন্ত প্রেম, রোমান্টিকতা ধরা দিয়েছে 
তোমার কবিতার ছন্দে, অনুভূতি আবেগে
কবিতা তোমাকে জাপটে জড়িয়ে ধরে আছে 
তোমার অমোঘ জীবনের নিরন্তর পথ চলায়। 

"সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়", তুমি এক প্রতিষ্ঠান 
দেখিয়েছ কাজেই তোমার মুক্তি 
তোমার মৃত্যু নেই---
প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে রেখে গেলে 'খিদ্দা' 
তুমি আপামর বাঙালির নিত্যদিনের অমরসঙ্গী! 



  মৃত্যু
শ্যামলী বর্ধন 

থিতিয়ে যাবে তোমার দুঃখের
যাবতীয় রসদ।  অকপটে নরম
খোলা মুখে উড়বে। নিদারুণ 
অকল্পনীয় ঘটনা। যা একসময়
হড়হড়িয়ে মেঘ নামাতো।
যন্ত্রনায় কাতরাতে কাতরাতে
জরাজীর্ণ শরীর মৃত্যুকে
না মানার কষ্ট।  সময় সব
হজম করে। মানুষ নামের মহিমা। 



প্রিয় কবি ও অভিনেতা ফেলুদাকে প্রণাম 
অমরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী

হে মহান
সমাজ ও প্রকৃতির জলপ্রপাতের ধারার মাঝে 
রবিঠাকুরের লেখনীকে ভালোবেসে সামাজিক সঙ্কীর্ণতার অচলায়তন ভেঙ্গে সংবেদনশীল মন নির্মানে, আত্মসমীক্ষনের অধিকারী। 
তুমি তো কেবলই অভিনেতা নও তুমি যে প্রাণের কবি , আবৃত্তিকার,নাট‍্যকার।
আরো কত কী
চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি মনটাকে আবদ্ধ কারাগার  থেকে মুক্তি দিয়ে অপার শান্তি  পেতে মনোরম তোমার সৃষ্টিই আমাদের হৃদয়ের মাঝে সর্বদাই নমস‍্য।
তাই তুমি জীবনের চেয়ে অনেক বড়ো। সেদিন শান্ত সন্ধ্যায় তোমার নিথর দেহটিকে ফুলে ফুলে সাজিয়ে হাজারো অনুরাগীর কান্নায় কলকাতার রাজপথ অশ্রুসিক্ত।বলো কবি সত্যিই কি তুমি ছুটি নিয়ে চলেছো অমৃতলোকে।শুধু আমাদের প্রণাম টুকু নিও।


এ তার মৃত্যুসাজ  
নৃপেন্দ্রনাথ মহন্ত 

চোখের আদল মটরশুঁটির মতো 
তাকিয়ে আছে সে দূরের আকাশ পানে
তাকে ঘিরে আছে কাছের মানুষ যত
মহীরুহ পতন  হল কি আমফানে?

জীবনাবসান আজ তার হল বটে
শুরু হল তার অমরত্বের কাল
মৃত্যু তো রোজ হাজার হাজার ঘটে
ক'জন বা করে মৃত্যুকে বানচাল? 

নশ্বর শরীর  হোক না পুড়ে ছাই
জীবনের থেকে ঠিকরে বেরোয় আলো
সে আলোর ঠিকানা রাজমহলে নাই
মানুষের মাঝে তার বাড়ি  জমকালো।

সত্য নয়-- এ তো তার  মৃত্যুসাজ
জীবন জেগেছে জীবনাবসানে আজ।




নির্বাক
মানিক কর্মকার

চির শান্তির দেশে পারি দিয়ে,
তুমি চললে পৃথিবী ছাড়ি,
বিষাদের সুর বাজিয়ে বুকে-
কইবে না কথা, নিলাম তবে আড়ি।।
কান্নাকাটির পরিপাটি আজ
মনের মানুষ হারিয়ে,
কালকেও বোধ হয় মলিন মনে
ডাকবে দু-হাত বাড়িয়ে।
তোমার সৃষ্টি অক্ষয়-অমর
স্মৃতির পাতায় লেখা,
সবার মনের আলোর প্রদীপ
জ্বালিয়ে রাখবে, বাঙালির ফেলুদা।।



নীল আকাশের তারা
   বিপ্লব প্রামাণিক


অজ্ঞাত পরিচয়ে আসিনু হেথা,
অচেনা সূর্য উদিত হলে-
সূর্যের তেজ অদৃশ্য পুঁথি-
বিশ্বসেরা স্কুল মায়ের কোলে।

সূর্য উদয়ের প্রভাত সঙ্গীতে-
জননী দেবী শেখালো আমায়-
জগৎজোড়া নীল ফলকে
উদিত সূর্য কেমনে ঘুমায়!

আঁধার নামিলে ভয়েতে কাঁদিলে
বুকেতে জড়ায়ে কহিতো মা,
'রবিমামা তোর্ গেল রে বাড়ি
আসিবে রে তোর্ চাঁদ মামা ।'

আধো আধো স্বরে কহিনু মায়ে রে,
'আসা যাওয়ার-ই এই কি জীবন!'
নাম -খ্যাতি- যশে তারারা যে খসে ,
'নীল আকাশে করে কি মিলন!'



ফেলুদা
অমল কুমার ব্যানার্জী 


জীবনের ছিয়াশি বছর কেটে গেল ফেলুদা,
চলে গেলে অজানা পথে তারাদের দেশে। 
জীবনে তো হেরে যাওয়া দূর,
সবাইকে হার মানিয়ে চলে গেলে।

বিসর্জন, বিয়োজন নয়, এতো আয়োজন,
অজানার দেশে পাড়ি দিলে তুমি।
শত শত অনুরাগী ভাবে শোকাহত,
আছ তুমি সাহিত্য সংস্কৃতি মাঝে। 
 
ডাক্তার মাস্টার মশাই দীর্ঘশ্বাস মাঝে,
দেখে তবু দেখেনি তো কিছু,
আজও সেই নির্বাক চোখ,
প্রতিবাদ করে সমাজের যতো অত্যাচারে। 

অভিনীত চরিত্রের ঘাত প্রতিঘাতে,
বাস্তব জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে অপু।
তোমার জীবন আর অভিনয়-
গাঁটছড়া বাঁধা সাতপাকে। 

শত সাফল্য মাঝে এতো ভবিতব্য,
বিসর্জন নয়, আয়োজন বিদায়ের।
থেকো সুখে অজানার দেশে,
প্রার্থনা শুধু, বিস্মৃত যেন নাহি হই।



আবার এসো

অর্পিতা ঘোষ পালিত


চিরতরুণ জীবনশক্তিতে ভরপুর অভিনেতা কবি

তুমি সকলের স্বজন, আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ

কিংবদন্তী তারুণ্যের আইডল…

জনতার ভিড়ের ওপর নক্ষত্র বিরাজিত

তোমার রশ্মি ছটায় চারিদিক আলোকস্নাতা


জীবনের খেলার মঞ্চ যবনিকা টানলো

অসহায় আমরা, সন্তাপের বেদনা বুকে

মানকেমনে অফুরন্ত মধুর স্মৃতির পাহাড়


প্রভুর কৃপায় আবার এসো আমাদের মাঝে

ভরিয়ে দাও সুনিপুন মঞ্চ...কবিতা প্রহর



       








৪টি মন্তব্য:

  1. Sompadok mohasoy ke osonkho dhonnobad r onnanno kobider sombordhona, dhonnobad🙏
    সুব্রত মন্ডল

    উত্তরমুছুন
  2. খুব সুন্দর শ্রদ্ধা নিবেদন।

    উত্তরমুছুন
  3. শ্রদ্ধাঞ্জলি শ্রদ্ধাঞ্জলি শ্রদ্ধাঞ্জলি শ্রদ্ধাঞ্জলি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

    উত্তরমুছুন
  4. সকলের শ্রদ্ধাঞ্জলি পড়লাম।
    চাটুজ্যে মশাই মিত্তির বাবু থেকে ফেলুদা চিরশান্তিতে
    এ যেন মৃত্যু নয় মৃত্যু সাজ রাজপুত্তুর মনুবাহন চির প্রশান্তির দেশে।
    আমার শ্রদ্ধাঞ্জলিটি (ফেলুদা) প্রকাশিত করার জন্য মনোনীত হয়েছেন ও প্রকাশিত হয়েছে। আমি কৃতজ্ঞতা।

    উত্তরমুছুন