বর্ষা ও বাঙালি -(পর্ব-৩)
পার্থ সারথি চক্রবর্তী
প্রেম নাকি অন্ধ! বর্ষার ঘনঘটায় এবং ছাইরঙা মেঘ দৃষ্টিকে আরো ঝাপসা করে তোলে । বর্ষা প্রেম আনে । বসন্তকে সরিয়ে রাখলে বর্ষা প্রেমের ও ঋতু। বৃষ্টির টুপ টাপ শব্দে, শুধু কানে নয়, মনের ভিতরে ও ম্যান্ডোলিন বেজে ওঠে ।
রিনি ঝিনি, রিনি ঝিনি... বর্ষার ছলাৎ ছলাৎ যৌবন! দাবদাহের পরে, তপ্ত মাটির পিপাসা মিটিয়ে অঝোরে নেমে আসে বৃষ্টি । অনেকটা অপেক্ষায় থাকা প্রেয়সীর কাছে প্রেমিকের মতো! বৃষ্টিদিন সবাইকে নিয়ে যায় ছেলেবেলায়।এখনো মনে হয়, বৃষ্টির সময় মাথার উপরে ছাতাটা একটু সরে গেলেই বা কি! মনের তো আর বয়স বাড়ে না ! বর্ষা যেন সেই তত্ত্বকেই সিলমোহর দেয়। কৈশোর- যৌবনের স্মৃতি ভীড় করে আসে। কখনো গীতবিতান খুলে পাতা উল্টে পাল্টে দেখা, কখনো বা সঞ্চয়িতা খুলে আবৃত্তি করা। আজো বর্ষার দিনে জানালা দিয়ে তাকিয়ে মন গেয়ে ওঠে-
" বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।"
বর্ষায় প্রেমে পড়া কি আর উঠোনে ইট পেতে পিছলে যাওয়া আটকানোর পদ্ধতিতে আটকে রাখা যায়! ফোটোগ্রাফারের ক্যামেরার লেন্স ঝাপসা হয়ে যায় চোখের মতোই। সবার বুকে হয়তো অলক্ষ্যেই লেখা হয়ে যায় অস্ফুট প্রেমগাথাঁ। টইটম্বুর মাঠ ঘাট যৌবনবতী বর্ষাকে কাছে পেতে চায় ।
অলস সন্ধ্যা বা রাতে মাঝেমধ্যে তালও কাটে! ঘোর বর্ষায় বিদ্যুতবিহীন হয়ে লন্ঠনের আলোয় বসে পড়ায় ফাঁকি দেওয়া র সুযোগ ও এসে যায় কখনো সখনো ।
বর্ষা মানেই পরতে পরতে স্মৃতি! ভাঁজে ভাঁজে জাদু!
মনের ভিতর থেকে ভেসে আসে -
আমাকে শৈশবে নাও;
ফিরিয়ে নাও অনেক, অনেক আগে
আমার যা কিছু বাড়তি, নিয়ে নাও
শুধু বৃষ্টি, শুধু বৃষ্টি দাও
আমি মাঝি হব, নৌকা বাইব
জল দাও, নদীভরে জল দাও
ডুবতেও রাজি আমি।
এই ডুবে যাওয়া কিন্তু জনপদ, গ্রাম, নগরশুদ্ধ ডুবে যাওয়া নয়! নদীর অগভীর হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত বালি তোলা ইত্যাদি কারণে জলধারণক্ষমতা এমনিতেই তলানিতে । কাজেই অনাবৃষ্টির পাশাপাশি অতিবৃষ্টিও বিড়ম্বনা বয়ে আনে। অপরিকল্পিত শহরায়ণ, যত্রতত্র নির্মাণ দুর্ভাগ্য নিয়ে আসে।এর জন্য তো আমরাই
দায়ী।
অন্যথায় বর্ষা বেশ পরিবেশ বান্ধব ঋতু, যার উপর মানবসভ্যতার অনেক কিছুই নির্ভর করে।
(চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন