শব্দেরা কখন কী হয়
শব্দগুলো খেপ খাটলে
অক্ষরেরা স্থূল জীবিকা।
দিনগত পাপক্ষয় বারোমাস্যার গানে।
শব্দগুলো রাজহাঁস হলে-
অপূর্ব ভঙ্গিমায়-
ডানার থেকে জল ঝেড়ে ফেলে।
বাঁকানো গ্রীবা বিচিত্রভাবে তুলে প্রিয়তমাকে কাছে ডাকে।
জলের উপর নৌকো ভাসিয়ে
আতঙ্কহীন সময় কাটায়-
সব দেখে সরোবর ধন্য।
পৃথিবী সবকটা রঙিন পর্দা সরিয়ে-
তাকিয়ে থাকে সরোবরের স্বর্গে।
ঝুপঝুপ করে বৃষ্টি নামলে
বুকের ভিতরটা নদী হয়ে যায়।
শব্দেরা ভেসে চলে যায় নদীর সাথে,
শহর ,নগর পেরিয়ে পেরিয়ে
সাগরের কাছে আসে ,
তরঙ্গমালায় গিয়ে মিলে যায়
শব্দেরা তখন অনন্ত
শব্দেরা তখন সীমাহীন জলধী।
ক্ষুধা
সামনে ,পিছনে,মাথার উপর,পায়ের তলায়-
ক্ষুধা নিয়ে সর্বত্র আমি দাঁড়িয়ে রয়েছি।
আমি একজন মানুষ।
আকাশটাকে খাচ্ছি ।
নদীটাকে খাচ্ছি।
পাহাড়গুলোকে চিবিয়ে চিবিয়ে ধুলো করছি।
অতল জলরাশির আধার ওই যে সমুদ্র -
আমার জ্বিহ্বায় উঠে এসেছে সেও।
কী না খাচ্ছি । কাকে না চিবিয়ে
ছিবড়ে করছি !
আগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে
আগ্নেয়গিরি অথবা দাবানলকে
গ্রাসের থালায় তুলে আনি।
জঙ্গল অথবা মরুভূমিকে
তারিয়ে তারিয়ে খাই।
ক্ষুধার কাছে আমি নত।
আমি শেরপা হয়েছি,
ডুবুরী হয়েছি।
ডাক্তার,মাস্টার,দানব অথবা-
ভিক্ষুক হয়েছি,
আমাকে এসব সেইতো বানিয়েছে ।
আমি একজন নগন্য মানুষ-
আমার সর্বস্ব জুড়ে সে আছে।
আমি পুড়ি, ভিজি, হাসি,কাঁদি
সবতাই তার জন্য।
ক্ষুধার থেকে নিজেকে আলাদা
করতে গিয়ে দেখেছি-
ক্ষুধা ছাড়া -আমি
জীবন্ত একখানা লাশ।
অমরত্ব
কয়েকজন মানুষ শিশিরবিন্দুর মত,
ক্ষণস্থায়ী অথচ সুন্দর।
তারা অলৌকিক সিঁড়ি ভেঙে
নেমে আসেন মাটিতে।
পাতার অথবা ঘাসের চিবুকে
নিঃশব্দে রাখেন শীতল স্পর্শ,
মুহূর্তে সারিয়ে দেন নিদারুণ জ্বর।
অথচ তাঁদেরও কষ্ট আছে,
যন্ত্রনা অথবা বিষাদ আছে।
মর্ত্যের মানুষ তাঁদের স্পর্শে
ধন্য হতে চান।
পদ্মের মত শুচিতা
শিউলির মত শুভ্রতা
হৈমন্তিক খামারে
শালিধানের মত সুগন্ধ
তাঁদের চারপাশে ঘিরে থাকে।
এইসব ক্ষণজন্মা মানুষেরা
মহাপুরুষ।
পৃথিবী- যাবতীয় মায়াজাল
বিছিয়ে রাখে।ফাঁদ পেতে রাখে।
তাঁরা সেই ফাঁদ পেরিয়ে
নেমে আসেন মাটিতে।
এই সব মানুষেরা বিষাদহীন বৃক্ষ হয়েছেন,
মোহান্ধ মানুষকে তাঁরা
পথ দেখিয়েছেন।
শিশির অথবা শিউলি হয়েছেন।
ঝরার ভিতর ,ত্যাগের ভিতর
এক ধরণের অমরত্ব থাকে,
তাঁরা সেই অমরত্ব কুড়িয়ে পেয়েছেন।
পরিবর্তন
আমার শহরের কাছে এসেছি।
শহরটা যেন থেকেও নেই
পুরানো অবয়বে তাকে পেলামনা।
মানুষের মত হয়তো তারও
শরীর ,মন বদলায় !
একটা গাছ ছিল এই শহরে।
বসন্তকালে লাল চেলিতে
মুখখানা ঢেকে রাখতো।
কত কথা হত তার সাথে।
যেদিন থেকে শহরটা বদলে গেল,
পথগুলো অচেনা হয়ে গেল,
গাছটাও অন্যরকম হয়ে গেছে।
এবার বসন্তে কাছে গেলাম,
নাম ধরে ডাকলাম।সাড়া পেলাম না।
একবার চোখের দিকে তাকিয়ে
মত চোখ সরিয়ে নিল।
সেদিন আমার খুব কান্না পেল।
শহর,রাস্তা এমনকি গাছটাও
ভুলে গেছে আমাকে অথচ
আমি ভুলতে পারিনি।
'অঙ্কুরীশা'ই-পত্রিকার সম্পাদকের প্রতি আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানালাম।
উত্তরমুছুনপত্রিকার জন্য অশেষ শুভেচ্ছা রইলো।
🙏
'অঙ্কুরীশা'ই-পত্রিকার সম্পাদকের প্রতি আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানালাম।
উত্তরমুছুনপত্রিকার জন্য অশেষ শুভেচ্ছা রইলো।
🙏