বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০

নির্বাচিত গুচ্ছ কবিতা।। গোবিন্দ বারিক

 

সংসার,বৈরাগ্য

দিন ও রাত্রির আকাশ যদি মিশে যায় অন্ধকারে
নতজানু মানুষ অসহায় আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে
উদ্ধত অহংকার ঢেলে দ্যায় ভূমিতে,
কারা যেন হাহুতাশ, গিলেটিন যন্ত্রে মাথা দেওয়ার মূহুর্তে গাছগাছালি তীব্র যন্ত্রণায় দুমড়ে
মুচড়ে মিশে যায় পথে,উম্ফানে

কারা যেন ভীষন তুফান মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অনাহূত আশ্রয়ের খোঁজে,পূনর্জন্মে
অনেকেই মৃত্যুলোকে আশ্চর্য সংযম- সংশয়ে
অনেকের ভিটেমাটি জলকাদা 'ঋজু পালিকা'
নদীর মতো, যেন মহাবীরের সিদ্ধলাভের
পরবর্তী ব্যাথাতুর জীবন-যাপন

মহাঝঞ্ঝার পর একাকী দুপুরে কেমন টলমল জলে দু'টো হাঁস ভেসে যায় অনুপম,
সত্যের পথে, সংসারে ও বৈরাগ্যে...





শরীর, মায়াময়

এইভাবে মুক্তি পেতে চাই না—

কেউ পাশে নেই, অশ্রুপাত নেই, নেই স্নেহ ভালোবাসা, নেই শরীর জড়িয়ে উষ্ণ হাতের ফল্গুধারা...

আকাশ এত কাছে, বাতাস বইছে অন্তরে বাহিরে
শরীর মগ্ন-ধ্যনস্হ , কি নেশায় ডুব দেব আমি?
এই বটের শিকড় মাটির গভীরে কতদূর,তার তো
জানি না, শুধু জানি,কী ভীষন স্বাধীনতা, মুক্তি__

দুপুর বইছে ঘরে,শুষনির ভাজা,আম-ডাল, রেশনের চাল, কতদিন পর নিথর গ্রামে ফিরে

বিহঙ্গ সময় পেরিয়ে ধীরে-ধীরে মাটির ঘ্রাণ
শেকড়ের টান জোনাকির অভিমান মেখে নিতে
জ্যেৎস্নায় ভরছি এক একটি রোমাঞ্চ -মায়ারাত।






অপেক্ষা, জেলেনি

খররোদে পেতেছে পলিথিন, খালপাড়
বাবলা গাছের শীর্ণ ছায়ায় শরীর, কিছু চুনোপুঁটি
মরা রুই, বাটা। তখন মধ্যাহ্ন, স্কুল ফেরৎ খাঁ- খাঁ
ফাঁকা মাঠ, তবুও জেলেনি পেতে রাখে অপেক্ষা

কতক্ষণ, কতদিন, কত রোদ ঝড় জল?
বসে আছে একাকী দুপুর, টাঙানো ধৈর্য
এই ধ্যান-প্রকৃতি অনুভব নিয়ে ফিরি ঘর...






ভালোবাসা, নিষ্ঠুরতা

লম্বা লাঠির মতো বিনুনি পাকিয়ে আগুন-রোদ
মেখে নিচ্ছে পুরুষ তালগাছ যেন পুরুষ 
ত্যাগ-তিতিক্ষা প্রশান্ত দেহের নিরূপম সংসার
কখন ঝড় ভাঙতে ভাঙতে তার শরীর হয় সন্ধ্যা

অন্ধকার সইতে সইতে নারী হয়ে যায় দিন
যন্ত্রণাগুলো প্রসব করে এক এক জন্মের...

যেখানে নিষ্ঠুরতা ও ভালোবাসা শুধুই পরিপূরক।






দুপুর, রাই 

নিস্তব্ধ দুপুরজুড়ে মনকেমনের নিরালা রোমান্টিক সুর ভেসে আসে উতলা বাতাসে
সবে তো বৈশাখী সংক্রান্তি
অলস মধ্যাহ্নে সংসারী পেতেছে শীতলপাটি
পাঁকজল,  কলমি শাকের ভেতর অপেক্ষায় সারস, এই দৃশ্য কী দেখা যাবে অনন্তকাল?

ঘূর্ণিঝড়ের মতো দু'চারটে পুঁতি-পাতা 
উড়িয়ে নিয়ে গেল হঠাৎ-হাওয়া

মনে হলো,যারা পরিযায়ী শ্রমিক, তারাও কি
এই গনগনে দুপুরে কোথাও হেঁটে চলেছে
আমাদের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট ভাতের খোঁজে?

রোদ্দুর লাগে না গায়,যদি কেউ রাই খুঁজে পায়...


















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন