------------------------------------------------------------
বিজ্ঞান বিষয়ক বিশেষ গদ্য
---------------------
সমাজ, ব্যক্তি ও ব্যক্তিত্বের সামাজিক ভিত্তিঃ
—পার্থ সারথি চক্রবর্তী
একথা বলা কঠিন নয় যে, মানুষ হঠাৎ করে নর ও নারী রূপে কোন এক স্হানে দৈব কোন শক্তিবলে আবির্ভূত হয়ে বংশবিস্তার করে আজ ৮০০ কোটি মানুষের পরিবারে পরিণত হয় নি । জীববিজ্ঞানের ছাত্র মানেই জানেন যে, প্রাণের উদ্ভব ও বিকাশের প্রক্রিয়ায় বিরুদ্ধ দ্বৈত সত্তার অবস্থান ছাপ ফেলে থাকে ।এখানে কাল্পনিক দৈব শক্তির কোন স্থান নেই ।নর ও নারীতে বিভাজন মানবিক সত্তার অস্তিত্ব ও বিকাশের প্রক্রিয়া; যা নিরবচ্ছিন্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।এই শিক্ষাই সমাজে নর-নারী ভেদাভেদ, উঁচু-নীচু বিকৃত চিন্তা সমাজকে এবং তার বৃহত্তম অংশের মানুষকে কালিমালিপ্ত বা কলুষিত হবার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।গত ১০/১২হাজার বছরে মানবদেহের বিশেষ কোন পরিবর্তন না হলে ও তাদের মানসিক জগতে এক সুবিশাল পাহাড়-প্রমান বদল এসেছে ।এই পরিবর্তন ঘটে চলেছে ব্যক্তির চরিত্রে । এই চরিত্র বা ব্যাক্তিত কোন বিমূর্ত বিষয় নয় ।পারস্পরিক দ্বন্দ্ব বা ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। সমাজ যেমন যেমন পাল্টায়, মানুষের ব্যক্তিত্ব ও তেমন করেই পরিবর্তন হয় ।সাধারণত একটা ধারণা আছে যে, ব্যক্তিত্ব হ'ল শারীরিক কিছু বৈশিষ্ট্য এবং গাম্ভীর্যপূর্ণ আচরণ । এ ধারণা অবৈজ্ঞানিক ।ব্যক্তিত্ব মানুষের কিছু গুণ বা দোষ যা তাকে দীপ্তময় করে তুলতে পারে ।ব্যাক্তিত ব্যক্তিত্ব তার সামাজিক অবস্থান বা কর্মকাণ্ডে প্রকাশ পায় ।চিন্তা-ভাবনা, দৃষ্টিভঙ্গি, সিদ্ধান্ত গ্রহণের বলিষ্ঠতা ও স্বচ্ছতা, বুদ্ধি, জ্ঞান-প্রজ্ঞা, ইচ্ছা শক্তি ও চারিত্রিক দৃঢ়তা, সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যাদি গুণাবলীর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে।সৃজনশীলতা বা বিরুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সাহস ও দৃঢ়তাও ব্যাক্তিত্বের পরিচায়ক । এক কথায় মানবিক, মহান গুণের সমন্বয় যখন একজন ব্যাক্তির মধ্য দিয়ে প্রতিভাত হয়, তখন সেই রূপ হল তার ব্যক্তিত্ব । সমাজ বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন যে, সমাজে উৎপাদন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে মানুষের নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে ।আদিম জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করলে দেখা যায় যে, তখনকার সমাজ সম্মিলিত প্রয়াসের উৎপাদন-কেন্দ্রীক ছিল ।উৎপাদিত দ্রব্য ভোগ করাও ছিল যৌথ-প্রয়োজন এবং উপলব্ধতা অনুযায়ী তা ব্যবহার করা হত।সম্পদ জমানো বা গচ্ছিত রাখার ইচ্ছা বা প্রবণতা চোখে পড়ত না ।গোষ্ঠীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হতেন গোষ্ঠীপতি।বাকিদের মধ্যে ও এইসব গুণাবলি কমবেশি থাকত।যদিও পরে ধীরে ধীরে গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজ ভেঙে চুরমার হয়ে যেতে শুরু করে।বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সমাজ এগিয়ে যেতে থাকে ।গুণগত নতুন সমাজ ব্যবস্থার প্রয়োজন দেখা দিতে শুরু করে ।তার বিশ্লেষণ এই আলোচনার বিষয় নয়।
ছবির উৎস - গুগুল (নেট)
বিগত ১০/১২ হাজার বছরের এই ইতিহাস মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা ও বিশ্লেষণ-ক্ষমতায় একটা উচ্চমান প্রতিষ্ঠা করে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চিন্তা ও ব্যক্তিত্ব আলাদা হতে থাকে । সমাজ ও তার সামাজিক প্রভাব মানুষের বুদ্ধিমত্তার মোড় ঘুরিয়ে দিতে থাকে ।মানুষ বস্তুজগতের সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি । শুধুমাত্র দেহতন্ত্র ( anatomically) বা শারীরবৃত্তীয় (physiologically) চিন্তা করলে হবে না। মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্র মস্তিষ্ক হ'ল বিশ্বে বস্তুর সর্বোচ্চ গঠনতন্ত্র ।মানব মস্তিষ্ক তাই চিন্তা করতে পারে, অজানাকে জানতে পারে। বিশ্বের রহস্য জানতে সে তার মস্তিষ্ক কে ব্যবহার করতে পারে। কবিতা, শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান নিয়ে ভাবতে পারে।নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মাপকাঠিতে বিচার করতে পারে । ফলে আদিম কাল থেকে মানুষ যে জানার সংগ্রাম শুরু করেছে তা চালিয়ে যেতে পারছে।জ্ঞানের স্পৃহা এবং তার জ্ঞান ভান্ডারের সম্প্রসারণ তাই অপ্রতিরোধ্য ।সৃজনশীল ক্ষমতার সম্প্রসারণ অসীম ও অশেষ প্রক্রিয়া ।মানুষের জ্ঞান, সৃজনশীলতা তাই অসীমের দিকে দুর্নিবার গতিতে প্রবাহিত হয়ে চলেছে ।
বিঃ দ্রঃ- এই বিশেষ গদ্যের জন্য দুটি ছবির উৎস Google(নেট) থেকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন