ব্যাঘ্রমহাশয়
বাঘ এসেছে কলকাতাতে
সবাই ভয়ে কাঁপে
কেউ জানে না কখন ঘাড়ে
পড়বে যে এক লাফে।
রাস্তাঘাটে লোক কমেছে
অফিসপাড়া ফাঁকা
বিক্রিবাটা বন্ধ এখন
যতই ফেলো টাকা।
সবাই বলে, আগে বাঁচো
তারপরে তো কাজ
টাকার লোভে বাঘের হাতে
মরবো নাকি আজ?
বাসে-ট্রেনে লোক হয় না
পায় না চাকা গতি
ডোরাকাটা সামনে এলে
হয়েই যাবে ক্ষতি।
জনজীবন অচল এখন
সবাই ভাবে মনে
হেলেদুলে বাঘটা ভালোই
ছিল সোঁদরবনে।
কলকাতাতে কেন এল?
খাবার টানে আসা?
বাঘ তাড়াতে একটা উপায়
বের করবো খাসা।
টিভি চ্যানেল, নিউজ পেপার
খবর করে রোজ
আলোচনার পাশাপাশি
জমছে মহাভোজ।
বাঘের ছবি তোলার জন্য
ক্যামেরাম্যান ছোটে
মন্ত্রী ভাবেন, বাঘ তাড়িয়ে
জিতব আবার ভোটে।
বাগবাজারের পটলা ভাবে
সুযোগ এল হাতে
চুপিচুপি মনুমেন্টে
চড়ব গিয়ে রাতে।
জানতে কেউই পারবে না তো
উঠব একা একা
আশাকরি আমি বাঘের
পেয়েই যাবো দেখা।
টালিগঞ্জের টুম্পা ভাবে-
যাবো কপাল ঠুকে
বাঘের সঙ্গে সেলফি তুলে
দেবো যে ফেসবুকে।
হাজারখানা লাইক-কমেন্ট
নই তো আমি ভীত
সেই ছেলেটা থাকলে বাঘের
গলায় মালা দিত।
বাঘ ধরতে লোক বেরলো
অনেকগুলো দল
নামল পথে পশুপ্রেমী
চোখে তাদের জল।
চিড়িয়াখানার বাঘের কদর
কমল রাতারাতি
শুধু কি বাঘ? কেউ দেখে না
সিংহ, কুমির, হাতি।
কলকাতাতে বাঘ এসেছে
সেই বাঘটা কই?
বিশেষজ্ঞ চশমা চোখে
ঘাঁটতে থাকেন বই।
সিসি টিভি পায়নি ছবি
বাঘটা চালাক খুব
ডাঙায় সে কি ঘুরছে, নাকি
নদীর জলে ডুব?
ঢাক বেরলো, ঢোল বেরলো
বাঘ তাড়াতে হবে
ধীরে ধীরে মানুষ আবার
মেতেছে উৎসবে।
হয়ে গেল সব স্বাভাবিক
দূর হয়েছে ভয়
মানসম্মান খুইয়ে কাঁদেন
ব্যাঘ্রমহাশয়।
ধরার ছড়া
পাখির ডাকে ঘুম ভেঙে যায়
যখন নামে ভোর
প্রশ্ন জাগে হাজার, তবে
আসে না উত্তর।
উত্তর তো হাওয়ায় ওড়ে
ধরে নিলেই হয়
কিন্তু ধরব কেমন করে?
মনের মধ্যে ভয়।
ভয় সরিরে বাইরে আসি
আলোর মুখোমুখি
এই সময়ে আমার মতো
কে আর আছে সুখী?
আলোকধারায় স্নান করেছি
সারা শরীর ভিজে
সব প্রশ্নের সব উত্তর
ধরতে পারি নিজে।
একলা পথিক
কোন দিকে যায়, ঠিক থাকে না, কিন্তু সে রোজ যায়
অন্ধকারের উৎস থেকে আলোর ঠিকানায়।
যায় না একা, দুই পাশে তার অনেক মানুষ থাকে
দেখতে পাবে তাদের, যদি দাঁড়াও পথের বাঁকে।
ইচ্ছে হবে, ওদের সঙ্গে পা মিলিয়ে হাঁটি
কী করবে তারা, যারা এড়িয়ে চলে মাটি?
তারাও কি আজ নামবে পথে, যাবে আলোর দিকে?
শিকল ছিঁড়ে উড়িয়ে দেবে সমস্ত বন্দিকে?
এর উত্তর কেউ জানে না, একলা পথিক জানে
এগিয়ে চলার মন্ত্র শুধু ছড়ায় কানে কানে।
অন্ধকারের উৎস থেকে বেরোয় আলোর সুর
একলা পথিক এগিয়ে চলে, লক্ষ্য বহুদূর ...
গায়ক
অন্ধকারের তীব্র গন্ধ, চারিদিক শুনশান
ফাঁকা মাঠে বসে দামাল হাওয়াকে শোনাচ্ছিলাম গান।
ভজন, খেয়াল, ঠুমরি, গজল কিছুই ছিল না বাদ
কী জানি কেন যে গাওয়ার সময় মুখ ঢেকেছিল চাঁদ।
চলছিল গান, হঠাৎ কে যেন হুস করে এলো উড়ে--
বলল, 'আমার ঘুম ভেঙে গেল তোমার গানের সুরে।
পাশের শ্মশানে নতুন এসেছি, অপঘাতে গেছে প্রাণ
তুমি রোজ রাতে কিছুটা সময় আমাকে শোনাবে গান?
কোনো ভয় নেই, পারিশ্রমিক যা চাইবে, তাই পাবে
বিনিময়ে শুধু ভালো ভালো গান আমাকে শুনিয়ে যাবে।'
সেই দিন থেকে চিন্তা, অভাব সব হয়ে গেছে দূর
প্রতি রাতে এক শ্রোতার সামনে ছড়াই নতুন সুর।
কেউ প্রতিভার কদর করেনি, মানুষ শোনেনি গান
অবশেষে এই গায়ককে ধরে ভূত দিল সম্মান।
কাঠবেড়ালির লেজ
গাছের পাতায় রোদ পড়েছে, যাচ্ছে পাখি উড়ে
কে যেন গান গাইছে একা এদিক-সেদিক ঘুরে ।
কে গাইছে? যায় না বোঝা, হাওয়ায় ওড়ে সুর
উড়তে উড়তে যায় ছড়িয়ে অনেক অনেক দূর।
সুরের ছোঁয়া লাগলে গাছে ফোটে হাজার ফুল
ছোট্ট যারা, হয় যে দেখে আনন্দে মশগুল।
গাছের পাতায় রোদ পড়েছে, নেই তো রোদের তেজ
গানের তালে নেচে ওঠে কাঠবেড়ালির লেজ।
চলো সুন্দরবনে
যদি আমি পুষি একটা মস্ত বাঘ
কী কী উপকার হতে পারে, বলো ভেবে,
এটুকু শুনেই তোমরা করলে রাগ?
কী ভাবছো, বাঘ হাত-পা কামড়ে দেবে?
একদম নয়, মনে করো বাঘ যদি
পোষ মেনে যায় হিংসার কথা ভুলে,
সাঁতরে আমাকে পার করে দেবে নদী
সময়ের আগে নিয়ে যাবে ইসকুলে।
সকাল-সন্ধে ঘোরাবে নানান পাড়া
বাঘ যে নিরীহ-- ফেলবে না কেউ জেনে,
ফুটবল মাঠে খেলতে নিত না যারা
দেখবে, তারাই চলবে আমাকে মেনে।
রাস্তায় ভিড়? সব হয়ে যাবে দূর
হেঁটে যাবে বাঘ, তার পিঠে বসে আমি,
মনের মধ্যে বাজবে খুশির সুর--
তোমরা এটাকে মনে করো পাগলামি?
বাস্তবে এটা সত্যি হতেই পারে
বহুদিন থেকে ইচ্ছা পুষেছি মনে,
কোনো কাজ নেই সামনের বুধবারে?
বাঘ ধরে আনি, চলো সুন্দরবনে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন