একান্ত পদাবলী
শহরের ভাঙাচোরা রাজপথগুলো সবসময়
ধীরে ধীরে চলে,নতজানু হয়ে
বার্ধক্যের জড়তায় জবুথবু হয়ে,
ঝিরি ঝিরি সন্ধ্যা নামে পথের বাঁকে,
স্বপ্নগুলোকে অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছি
নামমাত্র মূল্যে, কিছু কিছু মূল্য ছাড়াই
ওই পথের কোন এক ফেরিওয়ালার কাছে,
আজকাল চলে যাওয়া প্রলম্বিত সময়কে মাপার
দীর্ঘ আকুতি কুড়ে কুড়ে খায়,
রাতের কপাট খুলে ভেতরে ঢুকতেই দীর্ঘ নীরবতা
সব পাখি ঘরে ফেরে ডানা ঝাপটিয়ে,
শুধু ফিরলে না তুমি গালিবের কবিতা হয়ে,
রাগ বাগেশ্রীর মোহময় সুরে ভিজে
এস নদীর হাত ধরে আবার পালিয়ে যাই
ভুভুজেলা বাঁশির সুরে মৌনী হয়ে
ভোরের কুন্ঠিত আঁচল শিশিরে ডুবিয়ে।
আমি ঘুমাতে চললাম অনন্তকাল
এখন আমার সমস্ত অবসাদ জেগে আছে
দেহের প্রতিটি শিরায় শিরায়, রন্ধ্রে রন্ধ্রে
আমি ঘুমাতে চলেছি অনাদিকাল,
ওই যে দূরের গাখোলা পাহাড়
কেঁদে কেঁদে পরিশ্রান্ত,
যাবতীয় ব্যর্থতা,যন্ত্রণা,লাঞ্ছনা,ক্ষোভ
যার বুকে জমে জমে
শক্ত পাথর হয়ে গেছে,
যার সাথে আকাশের ছিল নয়ানাভিরাম প্রেম
বাতাসেরও ছিল খুব সখ্য, মাখামাখি,
সেই গল্প পড়েছিলাম সারা দুপুর,
জানালা খুলতেই অপরাহ্ন শেষ হয়ে গেল
সন্ধ্যাও চলে গেল পরিযায়ী পাখির দলের সাথে
এল রাত কালো বিনুনি গেঁথে,
আমি ঘুমাতে চললাম অনন্তকাল।
আমাকে একা ফেলে
পড়ি মরি করে দ্রুত দৌড়ে এসেও
অহংকারী ট্রেনটাকে ধরা গেল না,
সে চলে গেল , হ্যাঁ সে চলে গেল
দাম্ভিকতার ধূলিকণা ছড়িয়ে
অবহেলার হুইসেল বাজাতে বাজাতে,
অবজ্ঞার ধূসর ঝাণ্ডা উড়িয়ে
কালো মিশমিশে ধোঁয়ার কুণ্ডলি পাকিয়ে,
আমাকে ব্যঙ্গ করে,উপহাসের অট্টহাসি হেসে।
আমার মুষ্ঠিবদ্ধ আঙুলগুলো শিথিল হয়ে এল
নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে ক্রমাগত ওঠা নামা,
উষ্ণ গরম, ওতে চৈত্রমাসের উত্তাপ
বুকের মরুভূমিতে সারি সারি যন্ত্রণার ক্যাকটাস,
দুচোখে হতাশার টুকরো টুকরো মেঘ
একটা সময় ট্রেনটা রেখায় রূপ নিল
তারপর ছোট্ট একটি বিন্দু হয়ে মিলিয়ে গেল
আমাকে একা ফেলে
এই জং ধরা জংশনে।
বেণী খোলার দিন
প্রতিদিন কোন উপসংহারে না টেনেই
আয়োজিত নাটকের সমাপ্তি ঘটে
শামুকের মতো গুটিয়ে যায় সোনাঝুরি সন্ধ্যা,
ব্যালকনিতে তখনও লেগে থাকে বিকেলের ছায়া
গোধূলির ঝাঁঝালো স্পর্শ,
খালি গয়নার বাক্সে খেলা করে বাতাসের বুদবুদ,
আজকাল খুব বেশি দেখি সেই বেণী খোলার দিন
স্বপ্নের ভেতর দিয়ে, কিংবা বাস্তবে,
থানকুনি পাতার গন্ধে বিভোর হওয়া দুপুরে
তামাটে রোদেরা লুকোচুরি খেলে,
ধানিরঙ জমিনে শুয়ে যায় মাঠ
পাহাড়ের গোপনীয়তায় ধস নামে,
আহত ভাষা গড়াগড়ি খায় পথের ধুলোয়
ধুলোয় ধূসরিত বাক্য বাতাসে ওড়ে,
আজকাল বড় বেশি মনে পড়ে, বড় বেশি
সেই বেণী খোলার দিন।
জরাগ্রস্ত সময়
যখন প্রবল বাতাসের আন্দোলনেও
তাড়িত হয় না রোদজ্বলা মন,
নিস্তরঙ্গ হয়ে থাকে বুকের পুকুর,
তখন চিলেকোঠায় শুয়ে যায়
ভাবলেশহীন গোটা আকাশপুরী,
পর্দা ঠেলে সজোরে প্রবেশ করে
টুকরো টুকরো হলদে রোদের আঁকিবুঁকি,
শুকিয়ে যাওয়া ভ্রুক্ষেপহীন চোখে
আঁচল ছড়ায় নিস্তব্ধতার কবিতা,
চর্তুদিকে কাঁটাতারের বেড়ার প্রদর্শনী
তারই মধ্যে থমকে যাওয়া দেহ,
এক পা এগোলে দু'পা পিছিয়ে পড়ে
ঘাসের হিজিবিজিতে আটকে যায় পা
সহসাই গ্রাস করে ফেলে দেহটাকে
এই অলিখিত জরাগ্রস্ত সময়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন