রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ।। সেন্টু রঞ্জন চক্রবর্তী










তুমি বাবু 


তুমি বাবু 
আমরা কুলি 
আমরাতো মানুষ নই, 
বাস স্টেশনে 
রেল জংশনে 
হেসে হেসে আমরা কেবলি 
মানুষের বোঝা বই |

আমাদের গায়ে 
ঘামের গন্ধ 
সুগন্ধি আপনার গায়, 
বাবু 
আমরা বেঁচে আছি 
একমাত্র আপনাদের 
অসীম কৃপায় |

আমরা কদর্য 
তাই দূরে থাকি 
ভয়ে ভয়ে আছি সরে, 
আপনি কি জানেন 
আমাদের গায়ের ঘাম 
পথে পথে 
রক্ত হয়ে যে ঝরে ? 

পুরো দুনিয়া 
আপনাদের জন্য 
আমাদের বলে কিছু নাই, 
আমরা অচ্ছুৎ 
অতি নিকৃষ্ট 
বলুনতো তাহলে 
আমরা কোথায় যাই ? 

ভালো যতো কিছু 
আপনারাই নিলেন 
উচ্ছিষ্ট শুধু আমাদের, 
এমন করে 
আর কতোকাল 
লাঞ্চিত হয়ে 
জীবন কাটাবো প্রমাদের? 

তাইতো আমরা 
প্রস্তুতি নিচ্ছি 
আগামীটা আমাদের চাই , 
আমরাও যে 
আপনাদের মতো 
মানুষ বটে 
সে বার্তাটি পাবেন সহসাই |





উঁচু আর নিচু 


নিচুজাত বলে 
ঠেলো যদি পিছে 
তুমিও যাবে একদিন সেখানে , 
অসহায় বলে 
সমাজের কলে 
আমায় রেখেছো যেখানে |

জেনে রেখো তুমি 
এতে আমার মোটেও 
হয়না অনুতাপ, 
আমার সমান 
পাবেই অপমান 
এ নহে আমার অভিশাপ |

তুমি যারে আজ 
করো অবহেলা 
একদিন দেখিবে তুমি, 
সেই তোমার 
রচনা করেছে 
সকলের পূর্ণভূমি |

উঁচু নিচু বলে 
কান্ড একি 
চলেছে মর্ত্যে আজ, 
স্বর্গ নরকের 
ভেদাভেদ করে 
ভাঙিছে মনের তাজ |

ভগবান কি শুধু 
উঁচুতে থাকে 
নিচুতে থাকেনা নাকি ? 
দেবতার ঘরে 
আলো দাও মিছে 
নিজেরে আঁধারে রাখি |

দেবতা ভেবে 
মাটির পুতুলে 
ভুলিছ মানুষ দেবতার কথা, 
উঁচু নিচু বলে 
আজকে চলছে 
নিষ্ঠুর বর্বরতা |

উঁচু আর নিচু 
যেনো নহে কিছু 
সকলে সবাই সমান, 
তোমাতে আমাতে 
ভেদাভেদ নাই 
সকলি এক হাতেরই দান |




আমলা কথা  


পাঠশালাতে তুখোড় ছাত্র 
অংকে জুড়ি মেলা ভার, 
ইংরেজিও কম নয় মোটে 
বিদ্যালয়ের অহংকার |

দুধের সাথে জল মিশিয়ে 
লাভ ক্ষতির অংকে, 
লেটার পেয়ে পরীক্ষাতে 
দিতো সবকে চমকে |

একদিন শুনি এই ছেলেটাই 
এখন বড়ো আমলা, 
সারা দেশে নাম পরেছে 
ইয়া বড়ো কামলা |

ঠান্ডা ঘরে বসত করে 
তিনিই বড়ো হুজুর, 
বাদ বাকি সব গোলাম তার 
আজ্ঞাবহ মুজুর |

মন্ত্রী বলো তন্ত্রী বলো  
তার কাছে নস্যি , 
তার ভয়ে ওষ্ঠাগত  
যতো পাড়াপড়শি |

বাড়ি এলে গাড়ির সারি 
অবাক সবে চেয়ে রয় , 
পাইক পেয়াদা জড়োসড়ো 
চাকরি যাবার করে ভয় |

আমলা মানে বড়ো গামলা 
জটিল মামলার কারিগর, 
একটু যদি পেয়ে বসে 
যাবে কিন্তু বাড়িঘর |

আমলা হলো কাঁচা হলুদ 
শাক সব্জি ব্যঞ্জনে , 
তাদের ছাড়া হয়না কিছুই 
কায়দা যতই রন্ধনে | 

আমলা মানে কামলা বড়ো
গামলা ভরা ঘাস, 
পাহাড় চূড়ায় করতে পারেন 
জল পদ্মের চাষ |

আমলা কথা আমলা নামা 
মহাকাব্যের ছন্দ, 
আমলারা সব ভালো দেখেন 
আমরা যখন অন্ধ |

দেশ চলেনা আমলা ছাড়া 
ভেলকিবাজির কামলা , 
চিকন মোটা বুদ্ধি দিয়ে 
ভরিয়ে রাখে গামলা |

তাদের কিছু চামচা থাকে 
পাঁকা আমের মাছি, 
চারপাশে ঘিরে থাকে 
করে নাচানাচি |

রাতকে তারা দিন বানায় 
দিন বানায় রাত, 
আমলা পাড়ায় বাস করে 
আমলাদের হাতে হাত |

যে দেশে আমলা বেশি 
মামলায় ভরা দেশ, 
আমলাতান্ত্রিক দেশ হলে
সব কিছুই হয় শেষ |







এখন বিবর্ণ সময়


এখন বিবর্ণ সময়
মানুষ থেকে মানুষের দূরত্ব বেড়েছে 
শুধু আত্মরক্ষাই আজ একান্ত জরুরী, 
এখন হাতে হাত রাখার বিধান নেই 
অমোঘ এ নিয়ম মেনে 
মনুষত্বের ভাসান উৎসব চলছে পৃথিবীতে |

আগামীর কথা ভেবে ভেবে 
নির্ঘুম প্রহর অতিক্রম করছি আমরা, 
বিরামহীন ছুটে চলেছে সময়ের কাটা 
শ্রান্তিহীন ক্লান্তিহীন ভ্রূক্ষেপহীন জীবন |

পায়ের তলার মাটি ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে 
ক্রমান্বয়ে আমরা ভীত ও স্পর্শহীন হয়ে যাচ্ছি 
ভাবতে গেলে বুকটা কেঁপে উঠে 
অজানা আশংকায়, 
কাছের মানুষগুলি এখন আর 
আগের মতো নেই 
আত্মরক্ষায় কেবলি ত্রস্ত ওষ্ঠাগত প্রাণ |

কাছে আসার গল্পের বই 
কিংবা কবিতার পংতি 
ভালোবাসাহীন এ দুঃসময়ের কথা 
আরেকটা ইতিহাস গড়বে সাইসাই, 
আগামী প্রজন্ম অস্তিত্বের সংকটের সামনে দাঁড়িয়ে 
কখনো যদি পূর্বপুরুষের কথা ভাবে 
তা হলে 
তাদের কাছে কি হবে উত্তর সেদিন?  

পৃথিবী ঘুরে ঘুরে 
সূর্যের উষ্ণ উত্তাপ নিয়ে 
বেঁচে আছে এতদিন সদ্যজাত শিশুটির মতো, 
সমস্ত বলয়ে 
কিংবা 
গ্রহের কোনো কৃষ্ণগহ্বরে 
অজানা অনাবিষ্কৃত 
বিজ্ঞানের ব্যর্থতার দায়ভার কে নেবে ? 

মানুষ বলে 
আমাদের গর্ব করার কি আছে ? 
অকাতরে প্রাণের বিনাশের মর্মান্তিক পরিণতি 
আটকাতে পারছি কই, 
এ অদ্ভুত সময়ে 
নির্বিকার ও অসহায় হয়ে আছে পুরোটা পৃথিবী |










কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন