বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ




---------------- ---------------- 
দীপক বেরা
---------------------------------









ভালোবাসার গভীরতায়
      

ভালোবাসার গভীরতায়, 
হৃদয়ের নরম মাটিতে... 
একটা বীজের অঙ্কুরোদ্গম হয়, 
জন্ম নেয় এক উদ্ভিদ --
পরম মমতায় যত্নের লালনে আদরে বাঁচে! 

অনেকেরই, কিছু যায় আসে না তাতে
কেননা, তাদের উঠোনে আছে মহাবৃক্ষ 
অতি প্রকান্ড,.. অনেক বড়ো পরিসরে
বাহ্যিক আকারে আয়োজনে সম্ভারে..
বৃহত্তর শক্তির প্রতিনিধি যে ওরা।

মূলধন ওদের যৌনশক্তি 
ওরা বাজারে সওদা করে ভালোবাসা 
মিশে যায় ওরা,.. নীল আলোর অন্ধকারে 
বিপরীতে অপরের ঠোঁটে খায় চুমু, নিরন্তর 
চিৎকার শিৎকার, অনাবশ্যক শব্দের আড়ম্বর 
ক্রমশ ডুবে যায় পেয়ালার তরঙ্গায়িত সমুদ্রে..! 

সমুদ্রের ভেতরেও থাকে জলের বিন্দু 
হৃদয়ের গভীরেও থাকে অপার সিন্ধু.. 
ভালোবাসার গভীরতায়, 
অঙ্কুরিত বেড়ে ওঠা উদ্ভিদের শেকড় 
খুঁজে চলে অবিরাম... 
হৃদয়ের শরীরী রহস্যের অফুরান রসদ ভান্ডার!


                    

    যে পথে গেলে
       

যে পথে গেলে,
প্রিয়তমের কাছে যাওয়া যায়
ছায়া পাওয়া যায়, শান্তি পাওয়া যায়
সুন্দর নেমে আসে এই বিবর্ণ ধূসর বুকে।
সূর্যাস্তে গোধূলির ছড়ানো রঙ গায়ে মেখে
অথৈ জলে নৌকা ভাসাই
আবছায়ায় দাঁড় বেয়ে চলি... 
শ্যাওলা মাখা জলে আকাশের ছায়া জাগে 
আকাশের ছায়াপথ জুড়ে কতো গল্প-গাথা.. 
দাঁড় বেয়ে চলি... 
জল-রঙে ছবি আঁকি,.. স্বপ্ন আঁকি
সত্যসুন্দরের স্বপ্ন
পথ খুঁজে চলি নিরন্তর... 
অনেক বাঁক পেরিয়ে,.. মোহনা পেরিয়ে 
জীবন আছে সেই পথেরই খোঁজে... 
যে পথে গেলে, 
সেই প্রিয়তম সত্যসুন্দরের দেখা মেলে...!


                    

      চিরদহন বুকে 
       

কতোবার সামলেছি বিধ্বংসী ঝড়ের ত্রাস 
আর, সমুদ্রের বেপরোয়া উন্মত্ত জলোচ্ছ্বাস
আঘাতে আঘাতে বারবার ধুয়ে যায় --
জীবনের গায়ে ছোপ ছোপ ক্ষণিকের রঙ! 

খোলা আকাশের নিচে পেতেছি 
পলিথিন ঘেরা অগোছালো সংসার 
সেও তো সাময়িক, বড়ো ক্ষণস্থায়ী
ভাঙ্গাচোরা ঘরে ছেঁড়া পলিথিনের ফাঁকে 
আচমকা কিভাবে রোদ্দুর গলে পড়ে...
সেও তো কৃপণ বড়ো, আসে বড়ো দীণতায়
শুধু উঁকি দিয়ে যায় ক্ষণিকের অবসরে... 

হঠাৎ লাল সবুজ গেরুয়া রঙ-পতাকা উড়িয়ে 
আসে রাজা-মন্ত্রী... কতো এলিট বুদ্ধিজীবী 
বসে ডান বাম ঠিকঠাক দিকে... দূরত্ব মেনে 
কতো সাজগোজ... কতো বহুরূপী জামায় 
রোদমাখা মেঘছায়া স্বপ্নের পসরা সাজায় 
মিথ্যে প্রতিশ্রুতিতে আগামীর 'ব্লু-প্রিন্ট' আঁকে
ক্ষত উপশমের বদলে দহন বেড়ে চলে দ্বিগুন! 

শরীরে অস্ত্রের কালো দাগ লুকিয়ে 
চিরদহন বুকে, 
ওরা আজ অস্ত্রে দেয় শান... 
ঈশান নৈঋত বায়ুকোণে জমে কালো মেঘ 
বুকের মধ্যে আবার একটা ঝড়ের পূর্বাভাস!


                     

        পরিস্থিতির সাথে লড়াই 
             

পরিস্থিতির সাথে লড়াই, 
জীবনের পথ কঠিন, চড়াই-উৎরাই! 
পৃথিবী আজ গভীর অসুখে আক্রান্ত 
জীবন ঝরে ঝরে পড়ছে অবিশ্রান্ত..! 
চারিদিকে বচন তর্ক-বিতর্ক,.. অনর্থ 
কেউ কি দেয় সেই বচন,.. যা মহার্ঘ্য? 
মানুষেরা ঘুরছে,.. এঁকে দেওয়া বৃত্তে 
ভেবে দেখেনা,... চেতনার অতলান্তে! 
শত্রু সামনে পেছনে, কিংবা অদৃশ্য 
হাঁটতেই হবে পথ, দেখতে শেষ দৃশ্য! 

জাগো বন্ধু!.. মৃত্যু কাছে এলে 
ঘুরে দাঁড়াও, পরিস্থিতি সামলে!


                 

     মানুষ যখন অমানুষ 

কাল, যে অন্তঃসত্ত্বা হাতিটি 
মা হওয়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে...
সারা জঙ্গল জুড়ে বিচরণ করেছে 
তার দৃপ্ত পদসঞ্চারে, রাজকীয় মহিমায়...
আজ, সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে চিরনিদ্রায়! 
কতিপয় অমানুষের পৈশাচিক নারকীয় উন্মাদনায়! 

হায় ঈশ্বর! 
তুমি ওদের কী শাস্তি দেবে? 
'মার-এর বদলা মার'... না... 'মৃত্যুর বদলা মৃত্যু'...
গুলি... না... ফাঁসি?  কোন কঠিন শাস্তি?... জানি না! 
কোনো কঠোর শাস্তিতেই যেনো আজ, এ হৃদয় শান্ত হবে না! 

হে কবিবর! 
এ কী আপনার উক্তি!.. কী আপনার বিধান! 
ধীরে, কবিবর!.. ধীরে...
কবি'র হৃদয় হবে,
পাহাড়ের মতো নিশ্চল...
গৌতম বুদ্ধের মতো ক্ষমাশীল! 
এভাবেই, কবি'র গায়ে সেঁটে দেয় ওরা 'মেনিফেস্টো'.. 
শরীরে চাপিয়ে দেয় সহিষ্ণুতার পোশাকের দায়.. 
হৃদয় জুড়ে নিঃসঙ্গতার কবিতারা একে একে জড়ো হয়! 

মানুষ যখন অমানুষ হয়... তখন মানবতার মৃত্যু হয়... 
আর তখন, বিবেকের অন্তর্দহনে দগ্ধ হতে হতে...
একদিন...
মানবতার লজ্জা নিয়ে কবিদেরও মৃত্যু হয়..! 
                   






অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
  একান্ত অভিমত জানান
 bimalmondalpoet@gmail.com     



৩টি মন্তব্য:

  1. কবি, লড়াই করে যেতেই হবে! ভালো লেখা।

    উত্তরমুছুন
  2. আন্তরিক ভালোবাসা ও অশেষ ধন্যবাদ জানাই প্রিয়। মূল্যবান মন্তব্যে প্রাণিত হলাম। খুব ভালো থাকুন সতত। ❤️

    উত্তরমুছুন