—————————
মনোজ ভৌমিক
———————–
কবিতা আজ অস্তিত্ব খোঁজে
কবিতা এখন আর ব্যাভিলনীয় সভ্যতার ধ্বংসাবশেষে চোখ রাখে না।
রোম সাম্রাজ্যের ধ্বংস সময়ে রাণী মেরি আঁতয়ানেতের বিস্ময়কর প্রশ্নের উত্তর খোঁজে না।
এমনকি রোম সম্রাট নীরোর ধ্বংসোন্মুখ সভ্যতার বুকে বসে নিমগ্ন চিত্তে বাজানো ভায়োলিনের শব্দে কান পাতে না।
এখন ও সিন্ধুনদ উপত্যকায় গড়ে ওঠা উন্নয়নশীল দুই সভ্যতার
ধ্বংসের কারণ খুঁজতে খুঁজতে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে ছোট্ট দ্বীপে নাগাসাকি- হিরোসীমায় চোখ রাখে!
এখন এই উপত্যকায় কেবল ধর্মান্ধ বারুদের গন্ধ!!
যা বাবরীয় সাম্রাজ্যের শুরু থেকে দেখেছে ও!
আর দেখেছে ছদ্মবেশী ইংরেজ শাসনকালে।
এখন কবিতা একাগ্রচিত্তে আপন অস্তিত্ব খুঁজতে চায়...
তাই ও এখন উলঙ্গ রাজপথে একা হাঁটতে ভয় পায় না।
কারণ, ও বুঝে গেছে এ উপমহাদেশে ধর্ষণই শেষ কথা!!
দৈহিক ধর্ষণ - মানসিক ধর্ষণ -রাজনৈতিক ধর্ষণ আর ধর্মান্ধতার দোহাই দিয়ে মানবিক ধর্ষণ!!
দীর্ঘ চারটে দশক হাঁটার পর পঞ্চম দশকের শেষে একটু স্বস্তির শ্বাস নিতে চেয়েছিলো!
হঠাৎ কারা যেন বললো,"তোমার পূর্ব পুরুষদের নামের প্রমাণ পত্র দেখাও"।
হতবাক! বিষন্ন মনে কবিতা আজ অস্তিত্ব খোঁজে...
পাতাঝরা হেমন্তে
চুপিসারে ভিজে চোখে শরৎ গেলো চলে,
কিছুকথা বাকি ছিলো গেলো না তো বলে!
বনে বনে ঘুরেছিলো রঙীন প্রজাপতি,
শুধুই দেখেছে ওরে বলেনি তো "সাথী।"
অলিদের বুক ছুঁয়ে গেলো চলে পিয়াসী ভ্রমর,
পায়নি সময় ও নিতে ওর মনের খবর।
দিগন্তে ভিজে চোখে কত কথা গেছে বলে,
দেখেও দেখেনি ও..ছিলো না দেখারি ছলে।
শিউলি জেগেই ছিলো অচেনা ও রাতে,
টগরের প্রাণকথা শোনেনি সে প্রাতে।
আলোভরা খুশি নিয়ে চলে যায় গ্রাম্য বধু,
পাতাঝরা হেমন্তে একা আমি দাঁড়িয়ে শুধু।
সজীবতার আহ্বান
উড়ে উড়ে যায় কালো কালো শত মেঘ,
ঐ আকাশ মাপে হাওয়ার গতিবেগ।
মেঘবালিকারা জন্মেই যায় মারা,
বৃষ্টি কথা তোমাতে আমাতে হারা।
মাটি কেঁদে মরে ফুটিফাটা বুক নিয়ে,
আকাশটা কেবল দেখেই ওকে চেয়ে।
ধোঁয়া ধোঁয়া রঙে আকাশ যায় যে ভরে,
ভাবনা ছোটে বৃষ্টিমেঘ মনে করে।
দূষণে দূষণে প্রদূষিত ঐ হাওয়া,
আকাশের কাছে বৃষ্টি বৃথাই চাওয়া।
তুমি আমি আজ একসাথে পথ চলি,
অবুঝ মনের বদ্ধ দুয়ারটা খুলি !!
সবুজে সবুজে ভরে দাও দেশটাকে,
আফ্রিকা যেন তোমায় তাকিয়ে দেখে।
আবার বৃষ্টি আসবে পুরানো বেশে,
আমি ও তুমি বাঁচবো সজীব শ্বাসে।
সময়ের চশমা
চশমা পরেই দেখছি এখন সবারে পরিষ্কার,
খুলে ফেললেই দেখতে যে পাই,ঝাপসা অন্ধকার।
মানুষগুলো সব হাঁটছে আজ যে যার মত সে তার,
এ চশমাতে কেন দেখি গো বলো গোলমেলে সব ব্যাপার?
আসল কথা দোষ তো নয় এই সাবেকি চশমাটার,
চোখ দুটি খুলেই দেখতে হবে সময়টা যে দেখার।
ঐ চেহারাগুলি যেমন দেখছো আজকে তুমি সবার,
আসলে কিন্তু সঠিক ও নয়,চোখ ধাঁধানো ব্যাপার।
বন্ধু কথায় ছলাকলা আজ পাখির মতন দেখি,
কখন যে কোন ডালে বসে ওরা,ভাবনায় চোখ ঢাকি।
সম্পর্কেও এখন যে দেখি বড়ই ব্যবচ্ছেদ,
যোগ গুণ আর দেখি না হেথায়,ভাগ বিয়োগের জেদ।
সব চেহারায় একই ভাব,পয়সা তোমার কোথা!
চশমাটা এখন খুলেই ফেলো,নচেৎ মনেতে ব্যথা।
রোদ
ওদিন আমার কাছে শীত এসেছিলো,
ভীষণ হাড় কাঁপানো কামনা নিয়ে...
এই শরীরটাকে জড়িয়ে ধরেছিলো!
আমি চাদর মুড়ে ছিলাম।
তবুও বেহায়া শীত আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছিলো।
আমি ভীষণ ভাবে তোমাকে খুঁজছিলাম!
তুমি এলে...বিমর্ষ রাত কাটানো মধুর সকাল নিয়ে!
ব্যালকনি টপকে ধীরে ধীরে...আমায় ছুঁলে,
কী অপরিসীম তৃপ্তি তোমার স্পর্শে!
আবেশে দু'চোখ বন্ধ হয়ে আসছিলো...
তোমার মধুর চুম্বনে...আমি হারিয়ে যাচ্ছিলাম...
অবশেষে,তোমার তীব্র আকাঙ্ক্ষা,
আমার দেহাঙ্ক স্পর্শ করতে চাইলো!
আমি বিবষ হয়ে তোমায় জিজ্ঞাসা করলাম,
"আচ্ছা রোদ,তুমি কি সবাইকে এইভাবে হারিয়ে দাও!
না এই শীতকে হারিয়ে,নীবিড়ভাবে আমাকেই পেতে চাও?
তুমি কি সত্যিই আমায় ভালোবাসো রোদ!
শুধু আমায়!..না, আমার মতো আরো অনেক কে?
কিছু বলছো না যে?
তাহলে তুমিও কি..."!
অপ্রকাশিত লেখা পাঠান
মতামত জানান
bimalmondalpoet@gmail.com
সুন্দর লিখেছেন খুব ভাল লাগলো
উত্তরমুছুন