বুধবার, ২০ মে, ২০২০

নির্বাচিত কবিদের কবিতাগুচ্ছ


                             শিশিরকুমার বাগ





             উপহার

কাঠমিস্ত্রি কাজ করে চলে গেছে কবে,
রেখে গেছে ছোটো উপহার, কাঠের পিঁড়িটি।
করাত বাটালি নিয়ে নতুন ঘরের কটি দরজা জানালা,
মিস্ত্রির খেয়াল ছিল খুব,
বাতিল কাঠের টুকরো কাজে লেগে যাবে
মজুরির সাথে এর যোগাযোগ ছিল না কিছুই
যোগ ছিল মুড়ির থালায়
লঙ্কা পিঁয়াজ মাখা মুড়ি
সামান্য আয়োজনে যত্ন-পরশ ছিল কিছু
যত্নেই এঁকেছে মিস্ত্রি তার সাধ্যমতো
কাঠেক পিঁড়ির পরে সাদামাটা একখানা ফুল।
তারপর কতদিন কেটে গেছে জানা নেই, কত মাস কিংবা বছর
পিঁড়িখানা চুপচাপ বসে থাকে উনুনের পাশে
হঠাৎ বর্ষার দিনে আজ, অকারণে চাষিবউ স্মৃতি হাতড়ায়
কাঠমিস্ত্রি মুড়ি মাখে পরম তৃপ্তিতে, লাজুক চাহনিখানা
অনন্তের সুর যেন বাঁশের বাঁশিতে
বৃষ্টি পড়ার শব্দে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে থাকে।


         বিষন্ন পাখির গান

একটি বিষন্ন পাখি আমার দরজায় এসে
এক টুকরো সাদা পাতা ফেলে যায় রোজ।
এখন তো চিঠিপত্র নেই,
সাদা পাতা কত কি খবর নিয়ে আসে,
নদী ও বনের কথা লেখা থাকে পাখির ডানায়
লেখা থাকে আকাশের কথা।
এখন আকাশ কিছু সুনীল হলেও
বাতাসে বিষাক্ত কণা দুবেলাই ভয় নিয়ে আসে,
পাখির পাতায় আঁকা দুঃখ আর আশঙ্কার আবহ সংগীত
লেখা থাকে কোটি কোটি মানুষের বেদনার গান।

বিষন্ন পাখিটি কবে সূর্যমুখী চিঠি রেখে যাবে
আমাদের খোলা বারান্দায় ?


       মরুতৃষ্ণার দেশে

গোল চাঁদ হাতে নিয়ে বসন্ত হেঁটে চলে গেছে
ধূসর আকাশখানা মুখ নীচু কর্ দ্যাখে
খসে গেছে শুকনো ফুলের খোঁপা
জনহীন রাজপথে পাক খায় আশঙ্কার ধুলিকণা শুধু
বিকেল-ডানায় ভর করে একখানা কালো মেঘ
আবার হারিয়ে গেল স্টেশনের সুউচ্চ অশথ শাখায়।
মরুতৃষ্ণার দেশে
দিনযাপনের গ্লানি মেখে, আমিও তো বেঁচে আছি,
তুমি কেন বিশ্বাস হারাবে ?

এসো বন্ধু, হাতে হাত রাখি।


         রিফু

মেরামতি সহজ তো নয়. নিপুণ শিল্পের কাজ
নির্মাণের চেয়েও কঠিন।
একদিক থেকে রিফু করে আসি
মনে মনে স্বস্তি বোধ করি,
এবার তাহলে ঠিকঠাক সামলে নেওয়া গেল,
পরদিন সবিস্ময়ে দেখি
আবার নতুন ফাঁক তৈরি হয়ে গেছে
জীর্ণ পোশাকখানা সামলানো বড়ই কঠিন, বড় মায়া

কীভাবে যে রিফু করা যায় ?
ভাঙা ঘর, ছিঁড়ে যাওয়া মন।


         সাঁকো

কথা বলতে না পারার যন্ত্রণাটা
কাঠ পোকার মতো কুরে কুরে খাচ্ছিল অস্থির সময়টাকে
নিদারুণ অভিমানে যেন আয়নাটার মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছে কেউ
বিশ্বাসহীনতা কিংবা অবহেলার অর্থ খোঁজার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল
শব্দবোধ অভিধান,
আড় চোখের চাহনি দিয়ে কতদিন আর গতিবিধি মাপা যায় ?
প্রতীক্ষা শেষের ঘন্টা না শোনা গেলেও
সিঁড়িভাঙা অঙ্কটা ক্রমশ ছোট হয়ে আসছিল।
তুমি যখন ভাঙা সাঁকোর এ প্রান্তটা ঠিকঠাক সারিয়ে নিতে শুরু করেছ
তখন নিশ্চিত জানবে,
ও প্রান্তেও স্বপ্ন বোনার কাজ শুরু হয়ে গেছে।


লেখা পাঠান
bimalmondalpoet@gmail.com 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন