শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

নির্বাচিত কবিতা গুচ্ছ।। শাহীন রেজা

 



শাহীন রেজা’র কবিতাগুচ্ছ  



অধরার ধূপ

প্রার্থনায় ছিলোনা ভুল
তবু ভেঙ্গে যায় বৃক্ষ উড়ে যায় চুল

বুকের গহীনে নামে কুয়াশার ঢল
মধুমতি আঁকে চোখে বিদিশার জল

জীবন দিলোনা ছায়া
তবু তার বুক জুড়ে শালিকের মায়া

কবির স্মৃতিতে সেই বলেশ্বর কাল
নয়ন উজানে সেতো ধীবরের জাল

বায়োস্কোপ ক্রমশ জ্বালে অধরার ধূপ
তবু জল মায়া হয় তবু পাখি চুপ

কথা দিয়ে ভুলে যায় শরতের মেঘ
অঝরে পতন  তার কী অসীম বেগ

বাতাসে রোদন ঝরে মুছে যায় তাপ
তবুও দহনকাল তবু কাঁদে পাপ। 




ফিরিয়ে দিয়েছ জল

ফিরিয়ে দিয়েছ জল তবু পিছুপিছু নদী
যদি জলজস্পর্শ ঘটে; যদি-
প্রাণের অনলে বাজে ধূপছায়া বাঁশি
রাতের অধরে সুখ জোনাকের হাসি 
শ্রাবণকিশোরী নাচে ময়ূরীর তাল
বর্ষা বৃষ্টিতে কাঁপে মহুয়ার কাল 
ফসলমালতি ঠোঁটে কৃষাণীর ভাষা
কোজাগরী রাত আঁকে চাঁদোয়ার আশা
ফিরাতে ফিরাতে দিন রাত্রির কাছে
তবু নীল লেখা হয় মাধবীর গাছে।




না এভাবে নয়

না ঠিক এভাবে নয় 
তোমাকে চেয়েছি আমি সেই চেনা ঢংয়ে 
চোখে রিমলেস, মাথায় শঙ্খচূড় খোঁপা
আর দুহাতে শ্রাবণ চুড়ির ঢল; কলকল
হলুদ জমিনে লাল ডোরাকাটা; সেই প্রিয় শাড়ি 
পায়ে দু'ফিতার হালকা স্যান্ডেল চামড়ার 
কপালে প্রশ্নের ভাঁজ, গ্রীবায় চিরঔদ্ধত্য অহংকার।

না এভাবে নয়
কালো কিংবা ধূসরে ভীষণ মলিন তুমি
তোমাকে চিনতে চাই সেই লাল ও সবুজে
অকৃত্রিম মাধবীস্বভাবে।



রিলকের পাপ

আমি যেদিন কবিতা লিখতে শুরু করলাম সেদিনই রিলকের সমাধিতে 
খসে পড়লো এক টুকরো চাঁদ, দুটি নক্ষত্র এবং কয়েকটি পুষ্পমালতি।

শব্দের নিগূঢ় বন্ধনে বাঁধা পড়তে পড়তে অমিত্রাক্ষর ক্রমাগত সুতনীএমজে
আর আমার প্রেয়সীর চন্দনচর্চিত কপোলে শেষ পৌষের রোদ যেন আলোর বিষ্ঠা
নবী নয় ছবি হতে হতে ফিরে দাঁড়ালো আদমসুরাত।

আমি যেদিন কবিতা লিখতে শুরু করলাম সেদিনই পৃথিবীতে বাজলো ভোরের ঘণ্টা
পবিত্র বাতাসে উড়ে যেতে থাকলো জন্মের গ্লানি, মুছে যেতে থাকলো সৃষ্টির ক্লেদ
পূণ্যস্নানে মশগুল ভোরের অতিথি আর ছায়াগামী রিলকের পাপ।

.
বেদনার বোধ

ফিরে আসার জন্যই মাঝেমধ্যে দূরে সরে যেতে হয়।
দূরে যাওয়া মানেই চলে যাওয়া নয়, সরে যাওয়া নয়-
মেঘের ধূসর যত ঘন এবং গভীর হয় ততই বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে।

বর্ষা মানেই শুধু কষ্টের ঝরে পড়া নয়, বাষ্প হয়ে পুনরায় মেঘের সম্ভাবনাও বটে।
যদি আমি দূরে যাই, সরে গিয়ে মেঘ হই, ভেবোনা এ শুধুই পতন-
সকালের সকল পাখি নিশ্চিত ফিরে আসে সন্ধ্যায় নীড়ের আহ্বানে।
আমি যদি পাখি হই তবে জেনে রেখো তুমিই আমার প্রার্থনার চেনাপথ
কবির সকল গন্তব্যে এঁকে রেখো আস্থা ও বিশ্বাসের চিরচিত্র
জেনে রেখো, রোদনচেতন জুড়ে চিরকালই বোধনের অমোঘ সৃজন; সুরমায়া।

কবি যদি নদী হয় তবে তার সকল ঊর্মি জুড়ে ডানামেলা বেদনার বোধ
কষ্টের নীল ছুঁয়ে বেড়ে ওঠে কবি ও কবিতা, অভিমানে দৃঢ়তর প্রেম আঙ্গুরলতা;

মাঝেমধ্যে ফিরে আসার জন্যই প্রয়োজন দূরে সরে যাওয়া
পুড়ে গেলে খাঁটি হয় মাটি, দূরে গেলে চিরঞ্জীব প্রেম।






1 টি মন্তব্য: