বুধবার, ২৬ আগস্ট, ২০২০

দীর্ঘ কবিতা। শ্রাবণী বসু

 






     দু-ই রূপে 

      শ্রাবণী বসু


সামাল সামাল রব উঠলো -
সামলাবে কী সব,
তীব্র ফণায় আসছে নদী,
গ্রামের কলরব।

বাঁধভাঙা জল, এক পলকে
ঢুকছে হুহু করে,
সামাল রে প্রাণ ,
হাঁকছে মানুষ-
ডাকছে সমস্বরে।

এক কাপড়ে ,যেমন তেমন,
বাঁচতে হলে, যা-
রাক্ষুসী সে মানুষখেকো
নয়  সে এখন - মা।

হাঁকছে মানুষ -হেই সামালো,
কেউ থেকোনা -ঘরে,
বাঁধ ভাঙছে, জল বাড়ছে
পালাও , বাঁচো - ওরে।

বিকট শব্দে পাড় ভাঙছে,
জল বাড়ছে বেগে,
নিস্তার নেই - কালনাগিনী
উঠলো হঠাৎ রেগে।।


নদী এখন বিষধর সাপ,
ফুলছে ফণা মেলে,
দুলছে শরীর
দারুণ রোষে,
আপন খেয়ালে।

যে পাড়াটির বসত ছিল
নদীর কোমর ঘেঁষে,
নৌকা,মাঝির আনাগোনা
দেখতো অনিমেষে।

সেই পাড়াটি জলের নীচে
ঢেউয়ের আগে পিছে,
এক নিমেষে পুড়লো কপাল,
ভাগ্য ডুবিতেছে।


ধ্বংসলীলায় মগ্ন নদী
তীব্র বিষের ছোবল,
দিগভ্রান্ত জনজীবন
কান্নার উতরোল ।

পোড়ো মন্দির ,বুড়ো মসজিদ,
সত্যপীরের থান,
নদীর পেটে স্থান হলো সব
এলো - 'নদেয় বান '।

বিশালাক্ষী বটের ঝুরি,
ইস্কুল ,খেত, খামার,
নদী আঁকছে জল আল্পনা
নেইকো চিহ্ন নামার।

সঙ্গে শ্রাবণ ভীষণ প্লাবন
রাতদিন ঝরে জল,
স্রোতস্বিনীর ধ্বংস লীলায়
মানুষ ক্ষুদ্রবল।

আবার এলো শরৎ যখন
ওই নদীটি শান্ত
ফিরিয়ে দিল মাঠ ,প্রান্তর
সবুজ বন-বনান্ত।

তখন সে নয় ধ্বংসরূপী-
তখন নদী  - মা,
আঁচল জোড়া
স্নেহের ভিতর
তরল নীলিমা।

তখন সে নয় রুদ্ররূপী
তখন নদী - মায়া,
নিত্যকালের বয়ে চলায়
অনাদিকালের ছায়া।। 





1 টি মন্তব্য: